শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১.৬১°সে

রণক্ষেত্রের কৌশল পাল্টাচ্ছে রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক:ইউক্রেনীয় সেনাদের একটি দল মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য নিজেদের সাঁজোয়া যান থেকে বের হয়েছিলেন। তখনি গাছের সারির আড়াল থেকে রুশ সেনাদের গুলির মুখে পড়তে হয়। প্রায় এক ডজনের মতো সেনারা একটি পরিখায় অবস্থান নেয়। সেখানে কয়েক ঘণ্টার মতো আটকে থাকতে হয় তাদের।

সেই দলের এক সেনা মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেছেন, এত বিপুল সংখ্যক গুলি, এত দিক থেকে এর আগে কখনও দেখিনি।

ওই লড়াইয়ে ইউক্রেনের এক সেনা নিহত ও অপর নয়জন আহত হয়েছিলেন। বাখমুত শহরের কাছে মার্চ মাসে এই লড়াই হয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের হাতে আসা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওই লড়াইয়ে রাশিয়ার সেনারা উচ্চতর দক্ষতা ও সরঞ্জাম ব্যবহার করেছে।

এই ফাঁদ ছিল ধৈর্য্য, শৃঙ্খলাপূর্ণ অভিযান। যা ইউক্রেনে আক্রমণে প্রথম বছরের বিশৃঙ্খল বাহিনীর সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথম বছরের ভুল থেকে যে রুশ সেনাবাহিনী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে নিজেদের শুধরে ইউক্রেনীয় কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে, লড়াইটি ছিল সেটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যুদ্ধের শুরুতে ইউক্রেনীয়দের খাটো করে দেখেছিল রুশরা।

যুদ্ধের শুরুতের অস্ত্রের জোরে ইউক্রেনের বিস্তৃত ভূখণ্ড দখল করে রাশিয়া। কিন্তু বেশ কয়েকজন ইউক্রেনীয় সেনা, রুশ যুদ্ধবন্দি, কর্মকর্তা, বিদেশি যোদ্ধা ও পশ্চিমা কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও ইউক্রেনীয় নথি পর্যালোচনা করে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, গত কয়েক মাসে ইউক্রেনে রুশ সাফল্য, বিশেষ করে বাখমুত দখল করতে পেরেছে তাদের একাধিক সংশোধনের অংশ হিসেবে।

উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, রুশ সেনাদের কলাম এখন আর এমন স্থানে হামলে পড়ছে না যেখানে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতি বা ধ্বংস সাধন করতে পারবে। এখন সেনারা প্রায় সময় ড্রোন ব্যবহার করছে। অনেক সময় পরিখায় ইউক্রেনীয় অবস্থান শনাক্ত করতে চিৎকার করছে। আর ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ ইউক্রেনীয় সেনাদের তুলনায় কৌশল ও লড়াইয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করছে।

বহুল প্রতীক্ষিত পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছে ইউক্রেন। এই অভিযানে পশ্চিমাদের প্রশিক্ষিত সেনা, অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত সেনাদের ব্যবহার করছে কিয়েভ। কিন্তু মস্কোর বাহিনীও তাদের নিজেদের প্রতিরক্ষা, কামানের সমন্বয় ও বিমান বাহিনীর সহযোগিতার উন্নতিসাধন করেছে। এর ফলে যুদ্ধের শুরুর দিককার চেয়ে অনেক ব্যতিক্রম বাহিনীতে পরিণত হয়েছে রাশিয়া।

পশ্চিমা কর্মকর্তারা বলছে, এসব অগ্রগতির ফলে রাশিয়া একটি কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে। বিশেষ করে যখন তারা প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে থাকবে এবং রণক্ষেত্রে শক্তিপ্রদর্শন করবে। ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণের প্রাথমিক পরিকল্পনার চেয়ে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান লক্ষ্যগত বিবেচনায় অনেক দূরবর্তী বিষয়।

প্রায় ৬০০ মাইল বিস্তৃত রণক্ষেত্রে রাশিয়ার সামরিক শক্তির ধারে কাছে নেই ইউক্রেন। কারাবন্দিদের অভিযানে নেওয়া হয়েছে, সেনাদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি থাকলেও বাখমুত যুদ্ধে জয়ী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কামিকাজে ড্রোনের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে, গোলাবারুদের ঘাটতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে আকাশ থেকে বোমা ফেলাতে। সব মিলিয়ে এগুলো তাদের উদ্ভাবনী কৌশলগত পরিবর্তন।

ইউক্রেনের একটি ড্রোন ইউনিটের কমান্ডার গ্রাফ বলেন, তারা পেছনে থাকা সেনা কোম্পানি ও ব্রিগেডের কমান্ড পোস্ট খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। পরে তারা দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে তা ধ্বংস করছে বা অন্তত যতটা সম্ভব যোগাযোগে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। যুদ্ধের শুরুতে প্রায় নিষ্ক্রিয় থাকা রুশ বিমানবাহিনী নিজেদের কৌশল পাল্টেছে এবং গোলাবারুদ ব্যবহারে দক্ষতা দেখাচ্ছে। এখন তারা যুদ্ধবিমানকে ঝুঁকির মুখে না ফেলে ইউক্রেনীয় সেনাদের ওপর হামলা করছে গ্লাইড বোমা দিয়ে।

মার্কিন কর্মকর্তারাও স্বীকার করছেন রুশ সেনাদের কৌশলের উন্নতি হয়েছে। তবে রণক্ষেত্রে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা বলছেন, বাখমুতে রাশিয়ার সাফল্য এসেছে মূলত ওয়াগনার বন্দিদের রণক্ষেত্রে পাঠানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী থাকায়। তারা মানুষের জীবনের কথা ভাবেনি।

কিন্তু রণক্ষেত্রে সেনারা বলছেন, অন্য কিছু ঘটছে। বাখমুতে যেভাবে লড়াই শুরু হয়েছিল তার তুলনায় শেষটা ছিল অন্য রকম। বন্দিদের উপস্থিতি ছিল না শুরুর মতো। ওয়াগনারের পেশাদার যোদ্ধারা পদাতিক ও আর্টিলারি ইউনিটের মধ্যে সমন্বয় করে ইউক্রেনীয় অবস্থানে হামলা চালিয়েছে, ছোট দল ব্যবহার করে তাদের পিছু হটিয়ে দিয়েছে।

ইউক্রেনে যুদ্ধরত এক বিদেশি যোদ্ধা বলেন, ইউক্রেনীয়রা ওয়াগনারের গতির সঙ্গে পেরে উঠেনি। রাশিয়ার কৌশল মোকাবিলায় ইউক্রেনীয় সেনারা পিছু হটার সময় ভবনগুলোতে বোমার ফাঁদ তৈরি করে। যাতে রুশরা প্রবেশের পর ভবনটি বিস্ফোরিত হয়।

মার্চ মাসের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ ভালোমানের প্রশিক্ষণ পাওয়া বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তারা কার্যকরভাবে অস্ত্র ব্যবহার করেছে ও দ্রুত অবস্থান পাল্টেছে।

একটি অঞ্চলের রুশ সেনাদের এই উন্নতি পুরো রণক্ষেত্রে হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছে, রাশিয়া কৌশল পাল্টালেও তাদের সেনারা খুব বেশি অত্যাধুনিক হচ্ছে না। অভিজ্ঞ রুশ সেনাদের বেশিরভাগ যুদ্ধের শুরুতে মারা গেছে। যারা এখন লড়াই করছে এদের বেশির ভাগ কম প্রশিক্ষিত নতুন সেনারা। তারা আক্রমণ অভিযান পরিচালনায় জটিলতায় পড়ছে। বড় সামরিক ইউনিটের চলাচল নিয়ে সমন্বয়েও সমস্যায়। আর ২০২২ সালজুড়ে বিপুল সংখ্যায় ট্যাংক হারানোর ফলে এখন রুশবাহিনী রণক্ষেত্রের পেছনের সারিতে এগুলোকে রাখছে। সম্মুখে কামানের ব্যবহার করছে বেশি।

ইউক্রেনীয় ড্রোন ইউনিট কমান্ডার গ্রাফ বলেন, এই মুহূর্তে রুশদের পর্যাপ্ত ট্যাংক নেই। তাদের কামানের গোলাবৃষ্টি বর্ষণের মতো গোলাও নেই।

ড্রোন নজরদারি ও ইউক্রেনীয় পরিখার গভীরতা পরিমাপের চেষ্টা থেকেও রুশ কৌশল পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

রুশ দখলকৃত সভাতোভ নামের শহরের কাছে অবস্থান নেওয়া এক ইউক্রেনীয় সেনা বলেন, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আক্রমণের সময় রাশিয়া চিরাচরিত সামরিক কৌশল ব্যবহার করে পরিখার প্রতিরক্ষা ভেদ করতে চেয়েছিল। কিন্তু গত ছয় মাস ধরে তারা কৌশল পাল্টে ফেলেছে। চার দিন ধরে একটি অবস্থানে গোলাবর্ষণ করে ইউক্রেনীয় সেনাদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পর সাঁজোয়া যান পাঠায় রুশরা। অবশ্য ইউক্রেনীয়দের অবস্থান সম্পর্কে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য নেই। অনেক সময় তারা সবকিছু সঠিকভাবে করলেও প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছে না। কারণ তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই।

 

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত-১৪
রাখাইনে গুরুত্বপূর্ণ সেনা দপ্তর দখল করলো আরাকান আর্মি
আমরা আল্লাহর ওপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারত: দুলু
১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পলাশবাড়ীতে ৫ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

আরও খবর