ফুলবাড়ী প্রতিনিধি:দিনাজপুর
মাথায় সাদা কাপড় বাঁধে ৪ দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির শ্রমিক ও কর্মচারীরা। বড়পুকুরিয়া খনির অভ্যন্তরে শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সামনে এ অনশন করছেন তারা।চাকরি স্থায়ীকরণের এক দফা দাবিতে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির আউটসোর্সিং অস্থায়ী কর্মচারীরা অনশন শুরু করে।
আজ সোমবার বিকেলে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সামনে এবং মসজিদের আশপাশে মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে কেউ শুয়ে, কেউ বসে।
মাথায় সাদা কাপড় বাঁধার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমাদের শেষ যাত্রায় ব্যবহার করা হয় সাদা কাপড়। তাই আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে এখানে বসে আছি। আগে কর্মবিরতি পালন করেছি, এখন দাবি আদায়ের জন্য অনশন করছি। অনশন শুরুর চার দিন হয়ে গেলো, সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।
শ্রমিকরা জানান, প্রথমে তারা গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে খনিতে বেতন বৈষম্য, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা, ওভার টাইম ও উৎসব বোনাস, নৈমিত্তিক ছুটি ও মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ পাঁচ দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ডাকা কর্মসূচির অংশ হিসেবে কর্মবিরতি শরু করে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের দাবির প্রতি খনি কর্তৃপক্ষ দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা শুক্রবার থেকে শুরু করে আমরণ অনশন কর্মসূচি।
এদিকে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের প্রতিনিধি আশরাফুল আলম ও রবিউল ইসলাম জানান, তারা ১৫-২০ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কিন্তু স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় তাদের নানা সুবিধা, যেমন বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, বৈশাখী ভাতা এবং উৎসব ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বিষয়টি খনি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন থেকে ঝুলিয়ে রেখে একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে চাকরি করলেও স্থায়ী কর্মচারীদের তুলনায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তারা।
তারা বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ২০১৮ সালে এক প্রজ্ঞাপণ জারির মাধ্যমে আউটসোর্সিং কর্মচারীদের ওভার টাইম, উৎসব বোনাস, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বাতিল করা হয়। ফলে অস্থায়ী কর্মচারীরা পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েন। এরপর জুলাই-আগষ্ট অভুত্থ্যানে স্বৈরাচার সরকারের পতন হলে এসব কর্মচারীদের মনে আশা জাগে।
তারা বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে ঢাকায় আন্দোলন করেন। তখন উপদেষ্টা পরিষদ বৈষম্যবিবেচনার আশ্বাস দিলে আন্দোলন শিথিল করে কাজে যোগ দেন। কিন্তু ৬ মাসেও দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আবারও আন্দোলনে যায় কর্মচারীরা। সেই আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। কিন্তু এতে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ না থাকায় এক দফা দাবি ‘চাকরি স্থায়ী’ করণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আমরণ অনশন শুরু করেছেন।
এছাড়া, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির আউটসোর্সিং কর্মচারীদের স্থায়ী নিয়োগ দিতে বলা হয়। কিন্তু খনি কর্তৃপক্ষ নানা তালবাহানা করে এবং রায় বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে। সর্বশেষ ২৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খনি কর্তৃপক্ষের রিভিউ খারিজ করে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।
এ ব্যাপারে খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ছানা উল্লাহ জানান, এই সমস্যা সারা দেশের, এই সমস্যা একক কয়লাখনির নয়। কর্মচারীদের যেসব দাবি, তা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত হলে খনি কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে।