স্পোর্টস ডেস্ক:
মালদ্বীপের কাছে হারলে বিদায় প্রায় নিশ্চিত ছিল। ড্র করলে থাকতে হতো নানা হিসাব-নিকাশের অপেক্ষায়। ভালোভাবে টিকে থাকার জন্য আসলে জিততে হতো বাংলাদেশকে। এমন সমীকরণ সামনে নিয়ে আজ মালদ্বীপের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল হাভিয়ের কাবরেরার দল। সন্দেহ নেই তীব্র চাপের ম্যাচ। আর এমন দিনেই জ্বলে উঠেছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়েও মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালের দৌড়ে ভালোভাবেই টিকে থাকলেন জামাল ভূঁইয়ারা।
এই জয়ে দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পয়েন্ট ৩। মালদ্বীপেরও ২ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট। ২৮ জুন বাংলাদেশের তৃতীয় ও শেষ গ্রুপ ম্যাচ ভুটানের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে জিতলেই সেমিফাইনালে চলে যাবে বাংলাদেশ। মালদ্বীপ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে লেবাননের বিপক্ষে। সেদিনই চূড়ান্ত হবে, গ্রুপ ‘বি’ গ্রুপ থেকে কোন দুটি দল চ্যাম্পিয়ন-রানার্স আপ হবে।
আজই লেবানন দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে ভুটানের সঙ্গে। ভুটান প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে হেরেছে ২-০ গোলে। একই ব্যবধানে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে হেরেছে লেবাননের কাছে।
পুরো ম্যাচেই বাংলাদেশ খেলেছে একতরফা ফুটবল। কখনোই মনে হয়নি, এই মালদ্বীপ বাংলাদেশের সঙ্গে সর্বশেষ ৬ ম্যাচের ৫টিই জিতেছে। আজও অবশ্য ম্যাচের প্রথম গোলটা মালদ্বীপই করেছে। ১৮ মিনিটে প্রথম আক্রমণেই গোল পেয়ে গেছে খেলার ধারার বিরুদ্ধে। বক্সের একটু বাইরে থেকে হামজা মোহামেদের শট বাংলাদেশ গোলকিপার আনিসুর রহমান ঝাঁপিয়ে পড়েও আটকাতে পারেননি। পরপরই বল ক্লিয়ার করতে আনিসুর পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে দ্বিতীয় গোলের রাস্তা প্রায় তৈরি করে দিয়েছিলেন।
৪২ মিনিটে বাংলাদেশ পেয়েছে সমতাসূচক গোল, যার উৎস বিশ্বনাথের থ্রো। সোহেল রানার লম্বা ক্রস তপুর হেড বাতাসে রেখেই পোস্টের কাছ থেকে রাকিব হোসেনের হেডে ১-০। চার ফুটবলারই বসুন্ধরা কিংসের। মনে হলো যেন কিংস গোল করেছে।
বাংলাদেশে যাবতীয় আক্রমণের সফল পরিণতি টানতে বারবারই মালদ্বীপের রক্ষণে হানা দিয়েছেন সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ। লেবানন ম্যাচে তপু রক্ষণ ছেড়ে ওঠেননি। কিন্তু মালদ্বীপ তো আর লেবানন নয়! আর এই ম্যাচ যেহেতু জিততেই হতো, তপু বারবার সেট পিচে উঠেছেন। মালদ্বীপের পোস্টে হেডও নিয়েছেন কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত নিজে গোল না পেলেও দলকে ম্যাচে ফেরানো এবং এগিয়ে দেওয়ার গোলে রেখেছেন অবদান।
৬৩ মিনিটে বাংলাদেশ কোচ তিনটি বদল আনেন। জামাল ভূঁইয়ার জায়গায় মোরসালিন, সিনিয়র সোহেল রানার জায়গায় মজিবর রহমান, গোলদাতা রাকিবের বদলি ইব্রাহিম। ৬৭ মিনিটে ইব্রাহিমের কর্নার থেকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথমে তপুর হেড, তারপর তারিক কাজী বল ঠেলেন পোস্টে। ফিরতি বলে তৃতীয় চেষ্টায় পোস্টে বল ঠেলেন তারিকই। লেবানন ম্যাচে তাঁর ভুলেই প্রথম গোল খেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যেন আজ করেছেন ডিফেন্ডার তারিক।
৮২ মিনিটে চোট নিয়ে তারিক মাঠ ছাড়েন, বদলি আসেন মেহেদী। ৯০তম মিনিটে ৩-১ করেন বদলি নামা মোরসালিন, জাতীয় দলের হয়ে তৃতীয় ম্যাচে প্রথম গোল করলেন ১৮ বছরের তরুণ মোরসালিন। সেমিফাইনালের হিসাব-নিকাশে তৃতীয় এই গোলটা হয়ে যেতে পারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ছক পাল্টে আজ চার মিডফিল্ডারের সামনে দুজন ফরোয়ার্ড রাখেন বাংলাদেশ কোচ। মোরসালিন ও সুমনের জায়গায় একাদশে আসেন মোহাম্মদ হৃদয় ও রাকিব হোসেন। ঘরোয়া ফুটবলে রকিব কিংসে উইঙ্গার হিসেবে খেলেন। লেবানন ম্যাচে শেষ দিকে বদলি নামালেও বলার মতো কিছু করতে পারেননি রাকিব। তবে আজ কাজের কাজটা করেছেন।
লেবানন ম্যাচে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা বল পায়ে রাখতে পারেননি। খেলতে পারেননি পাসিং ফুটবল। কিন্তু মালদ্বীপের সঙ্গে পাসিং ফুটবলই খেলেছে বাংলাদেশ। ফুটবলাররা প্রচুর দৌড়েছেন, জায়গা তৈরির চেষ্টা করেছেন। তাতেই মালদ্বীপকে রাখা গেছে চাপের মুখে।
১৯৮৫ সাফ গেমসে মালদ্বীপকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর এই প্রথম দেশটির জালে ৩ গোল দিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম সাফে মালদ্বীপকে হারাতে পেরেছে বাংলাদেশ।