অনলাইন ডেস্ক:
সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী। অবস্থান করছেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে। বর্তমান সময়ে বিএনপির রাজনীতিতে আলোচিত তিনি। দলের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলোতে অনলাইনে তাকে রাখা হচ্ছে। বিএনপির হাই কমান্ডের কাছের মানুষ হিসেবে দলের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তার মতামতের আলাদা গুরুত্ব থাকছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পর দলের পরবর্তী মহাসচিব হিসেবে তার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। দলের মধ্যেও প্রভাব বিস্তার করছেন তিনি। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের কাছে টানছেন। তরুণদের শেল্টারও দিচ্ছেন তিনি। নিয়ন্ত্রণ করছেন চট্টগ্রামের বিএনপির রাজনীতি।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসা থেকে নিখোঁজ হন সালাহউদ্দিন আহমেদ। এর ৬৩ দিন পর ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ সালাহউদ্দিনকে আটক করে। জানা যায়, এসময় তিনি 'উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাফেরা' করছিলেন। সেসময় সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সালাহউদ্দিন মেঘালয় পুলিশকে বলেছিলেন, ‘গোয়েন্দা’ পরিচয় দিয়ে কিছু লোক তাকে ঢাকার উত্তরার বাড়ি থেকে তুলে নিয়েছিল। প্রায় রাতভর গাড়িতে যাওয়ার পর তাকে শিলং নিয়ে যাওয়া হয়। তবে গাড়িতে কারা ছিলেন, কারা তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিলেন তা বলতে পারেননি সালাহউদ্দিন।
বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার দেখায় মেঘালয় থানা পুলিশ। একই বছরের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের দায়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর নিম্ন আদালত তাকে মামলা থেকে খালাস দেয়। রায়ের বিরুদ্ধে ভারত সরকার আপিল করে। ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শিলংয়ের জজ কোর্ট তাকে বেকসুর খালাস দিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেয়। একই সাথে সালাহউদ্দিনকে দ্রুত দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর পাসপোর্টের মেয়াদ না থাকায় সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ দূতাবাসে ট্রাভেল পারমিটের জন্য আবেদন করেন। নানা জটিলতার পর গত বছরের ১২ জুন তিনি ট্রাভেল পারমিটও পান। এর মেয়াদ ছিল তিন মাস। মেঘালয় আদালতের আদেশ ও ট্রাভেল পারমিট পাওয়ার পরও দেশে আসতে পারেনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য। ফেডারেল সরকার ব্যবস্থায় পররাষ্ট্র, অর্থ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। নিয়ম অনুযায়ী ভারত সরকারের অনুমিত ছাড়া বাংলাদেশে আসতে পারবেন না তিনি। মেঘালয় সরকারের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। অন্য সূত্রে জানা যায়, সালাহউদ্দিন আহমেদ ইচ্ছে করে দেশে ফেরা বিলম্বিত করছেন।
ভারতে অবস্থানকালেও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সভায় সালাউদ্দিনকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। শিলংয়ে থাকলেও তিনি দিল্লিতে নিয়মিত যাওয়া-আসা করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, ভারতে বসেও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কমিটি গঠনেও তিনি পিছন থেকে কাজ করছেন তিনি। ক্রামাগত দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ ১৯৯১ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এপিএস ছিলেন। এরপর সরকারি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার তিনি কক্সবাজার থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনবারের সাবেক এই এমপি বিএনপি সরকারের যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মেঘালয়ে গ্রেপ্তারের সময় তিনি বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব পদে ছিলেন। ভারতের কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি তাকে স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করে।
সূত্র-বাংলাদেশ জার্নাল