1. editorvonj@gmail.com : admin :
  2. nagorikit@gmail.com : administrator :
বাবার ক্যানসার-ছেলের হার্টে ছিদ্র, শের আলীর পরিবারে শুধুই অন্ধকার - Voice of New Jersey

বাবার ক্যানসার-ছেলের হার্টে ছিদ্র, শের আলীর পরিবারে শুধুই অন্ধকার

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট সময় বুধবার, ৫ মার্চ, ২০২৫
  • ১৯ বার দেখা হয়েছে

পাবনা প্রতিনিধি:

এক সময় সংসারে অভাব ছিল শের আলীর (৩৭)। তবুও স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। পেশায় রাজমিস্ত্রি শের আলী সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ছোট্ট সংসার, অনেক স্বপ্ন ছিল ছেলেকে বড় করে মানুষ করবেন।

কিন্তু ক্যান্সার নামক মারণ রোগে আক্রান্ত শের আলীর সেই স্বপ্ন কেবলই দুঃস্বপ্ন হয়ে এসেছে। শুধু কী তাই, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার দুই বছর বয়সি ফুটফুটে সন্তান আব্দুল মোতালিবের হার্টে দুটি ছিদ্র ধরা পড়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না তাদের। এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বাবা-ছেলে!

পাবনার চাটমোহর উপজেলার বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের ক্যান্সারে আক্রান্ত শের আলীর শরীরের শক্তি ক্ষয় হয়ে গেছে, এক সময়ের কর্মঠ মানুষটি এখন বিছানায় শুয়ে শুধু মৃত্যুর দিন গুনছে! পাশাপাশি ছেলে আব্দুল মোতালিবের মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরানো সহ্য করতে হচ্ছে তাকে।

ডাক্তাররা বলেছেন, শের আলীকে বাঁচতে হলে নিয়মিত কেমোথেরাপি নিতে হবে, কিন্তু চিকিৎসা খরচ জোগানোর ক্ষমতা তার পরিবারের নেই।

অন্যদিকে দ্রুত অপারেশন না করালে ছেলে আব্দুল মোতালিবকেও বাঁচানো সম্ভব নয়! অপারেশনের জন্য প্রয়োজন প্রায় ৪ লাখ টাকা। স্বামী এবং সন্তানের এমন অবস্থা দেখে এখন বিধ্বস্ত শের আলীর স্ত্রী শারমিন খাতুন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের মধ্যে দুটি চৌকির একটিতে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে শের আলী। অন্য চৌকিতে ছেলে আব্দুল মোতালিবকে বসিয়ে নেবুলাইজ করছেন মা শারমিন খাতুন।

জীর্ণশীর্ণ শরীরে ঠিকমতো অক্সিজেন না পাওয়ায় কাতরাচ্ছে নিষ্পাপ শিশুটি। পাশে বসে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মা শারমিন খাতুন।

জানা গেছে, শের আলীর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার পর এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এর জন্য ৭ শতক জমি, সোনার গহনা, গরু-ছাগল থেকে শুরু করে কোনো কিছুই বিক্রি করা বাদ রাখেনি পরিবারটি।

এদিকে শের আলীর জন্য একেকটি কেমোথেরাপির জন্য খরচ হয় ৩৬ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ১৯টি কেমোথেরাপি দিয়েছেন শের আলী। কিন্তু টাকার অভাবে ২০তম কেমোথেরাপি না দিতে পারায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি। অন্যদিকে প্রায় তিনমাস আগে ছেলে আব্দুল মোতালিবকে ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে দ্রুত অপারেশন করার কথা বলেন চিকিৎসক। কিন্তু টাকা জোগাড় করতে না পেরে ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন তারা।

নিঃস্ব শের আলী ও তার পরিবারের এখন ঠাঁই হয়েছে নানার বাড়িতে। যদি টাকা চান এমন চিন্তা করে আত্মীয়স্বজনরা যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রতিবেশীরাও ওই বাড়িতে আসা বন্ধ করেছেন একই কথা ভেবে।

এদিকে উপার্জন বন্ধ হওয়ায় ঘরে নেই খাবার। রমজান মাসে একপ্রকার না খেয়েই রোজা রাখছে পরিবারটি। তাদের ঘর এখন নিঃশব্দ কান্নায় ভরে থাকে। খাবারের কষ্ট, চিকিৎসার অভাবে জীবন সংকটে একটা পরিবারের বেঁচে থাকার সমস্ত আলো যেন নিভে আসছে।

শের আলীর স্ত্রী শারমিন খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, স্বামীর চিকিৎসা, সন্তানের চিকিৎসা। দুটোর জন্যই টাকা দরকার, অথচ সংসারে কোনো আয়ের উৎস নেই। আমার স্বামী দিনরাত পরিশ্রম করতেন সংসারে সচ্ছলতা ও আমাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। এখন তো সে বিছানায় পড়ে আছে। আমার ছেলেটার মুখের দিকে তাকালেই বুক ফেটে যায়! আমি কী তাদের দুজনকেই এভাবে হারাব? একজন নারীর কাছে স্বামী ও সন্তানের চেয়ে আপন কেউ নেই। সবার প্রতি অনুরোধ, আপনার এগিয়ে আসুন। আমার স্বামী-সন্তানকে বাঁচান।

বিষয়টি চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরীকে জানালে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই কষ্টকর। আমি সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে এবং ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে দাঁড়াব। সেই সঙ্গে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.

এই ধরনের আরও নিউজ

© কপিরাইট ২০২৫ | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: NagorikIT