স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের তথ্যমতে, ১৯৮৩ সালে ৩০টি বম জনগোষ্ঠীর পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠে মুনলাইপাড়া। সীমান্তবর্তী চুংচুংপাড়া থেকে বম জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো এখানে এসে জনপ্রতি পাঁচ একর করে জায়গা নিয়ে মুনলাইপাড়ায় বসবাস শুরু করেছিল। বর্তমানে এখানে প্রায় ৭০টি বম জনগোষ্ঠীর পরিবার এ পাড়ায় বসবাস করছে। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে পাড়ার সৌন্দর্যবর্ধন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সালিশ-বিচারের কাজ করেন। ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় দেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রামের তকমা পেয়েছে পাহাড়ের ছোট্ট মুনলাইপাড়া। চারদিকে পাহাড়বেষ্টিত এবং সাঙ্গু নদী পাশ ঘেঁষে গড়ে তোলা এ গ্রামটি দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায় ইকো-সিস্টেমের হোম স্টে ও পাহাড়ি রান্না, রোমাঞ্চকর ট্রেকিং, কায়াকিং, দেশের দীর্ঘতম জিপ লাইন ও বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে।
বান্দরবান জেলা শহর থেকে রুমা উপজেলার দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। রুমা বাসস্ট্যান্ড থেকে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মুনলাইপাড়ার দূরত্ব ছয় কিলোমিটার। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে বান্দরবান সদর থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় আদর্শ গ্রামটিতে।
স্থানীয় বাসিন্দার ইকো-ট্যুরিজমের উদ্যোক্তা জিংসম বম বলেন, বম জনগোষ্ঠীরা সুন্দরের পূজারি। এটি বম সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের অংশ। গ্রামের প্রতিটি ঘরের সামনে আছে ময়লা ফেলার ঝুড়ি (ডাস্টবিন)।
পাড়ার গৃহিণী লালনুন জির বম বলেন, সংসারের কাজকর্মের ফাঁকে গ্রামের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় দুবেলা কম হলেও ত্রিশ মিনিট সময় দিতে হয়, এটি বাবা-মায়েদের আমল থেকেই বংশপরম্পরায় করে আসছে।
মুনলাইপাড়া বম কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক রবিন বম বলেন, পানি সমস্যায় মুনলাইপাড়ার সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছগুলো মরে যাচ্ছে। পাড়াবাসীরাও পানির জন্য খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছে পানির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। পাড়ার বাসিন্দা শিক্ষক কালেব বম বলেন, এ গ্রামের বাসিন্দারা কেউই ঘরে কখনো তালা লাগায় না, কারণ এখানে চুরি হওয়ার কোনো ভয় নেই। ঘর খোলা রেখেই কেউ বাইরে গেলে প্রতিবেশী নিজের মনে করেই বাড়িটি পাহারা দেন।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, এ গ্রামে পানি সংকটের বিষয়টি আমাকে গ্রাম কমিটি জানায়নি। খবর নিয়ে সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।