জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা মনে করছেন, আমেরিকার ভিসানীতি ঘোষণা রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেনি। বরং বিএনপির নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন দুর্বল হয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের অধীনেই তাদের ভোটে আসতে হবে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে নিজেদের ওপর এই নীতির প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়েও ভাবনায় রয়েছে ক্ষমতাসীনরা। এমন প্রেক্ষাপটে কৌশলে বিএনপিসহ বিরোধীদের আন্দোলন মোকাবিলার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এজন্য মাঠের কর্মসূচিতে তাদের ছাড় দিতে রাজি দলটি।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সামনের দিনে বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে ইতোমধ্যে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আবার একেবারে ফাঁকা মাঠও ছাড়া হবে না। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ভিন্ন বার্তা যেতে পারে। ফলে বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে আগের মতোই নিয়মিত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবেন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে প্রতিবাদ প্রতিরোধের পরিবর্তে আয়োজনে হবে শান্তি সমাবেশ, মানববন্ধন, আলোচনা সভাসহ অহিংস কর্মসূচি। নির্বাচন পর্যন্ত এসব কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে আওয়ামী লীগ।
রোববার আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যৌথ সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন পর্যন্ত তৃণমূল পর্যায়ে আমাদের শান্তি সমাবেশ অব্যাহত থাকবে। কারও সঙ্গে পালটাপালটি কোনো কর্মসূচি আমাদের নেই। এ সময় কোনো অবস্থাতে আক্রমণকারী না হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এখন নাটক সৃষ্টি করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায়। বিএনপি দেখাতে চাইছে আমরা আক্রমণকারী। কেরানীগঞ্জে আক্রমণকারী তারা। অথচ বিদেশিদের কাছে প্রচার করেছে আক্রমণকারী হচ্ছে আওয়ামী লীগ। কাজেই কোনো অবস্থাতেই আক্রমণ করবেন না। আক্রমণ করব না। কিন্তু আক্রমণ করলে ছাড় দেওয়া হবে না।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, ভিসানীতি আমেরিকার নিজস্ব বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে নির্বাচন যেন সুষ্ঠুভাবে হয়, মানুষ যেন শান্তি ও স্বস্তিতে ভোট দিতে পারে তারা এ কথা বলেছে। আমরাও এটাই চাই। কেউ যেন দেশকে সহিংসতার পথে নিয়ে যেতে না পারে। গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার ওপর আঘাত করতে না পারে। সন্ত্রাস করে ভয়-ভীতি দেখাতে না পারে। এজন্য আমরা শান্তি সমাবেশ বা অন্য কোনো কর্মসূচির মধ্য দিয়ে হোক, জনমত গঠনের কাজ করব। আমরা কাউকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে দেব না। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা কারও কর্মসূচিতে বাধা দেব না। তারা তাদের কর্মসূচি পালন করবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করব। এখানে পালটাপালটি কর্মসূচির কোনো বিষয় নেই। তবে আমরা চাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকুক। দেশের মানুষ ভালো থাকুক। আমরা কাউকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে দেব না। কেউ এটা করতে চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তাদের প্রতিহত করা হবে।
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বছরের শেষ দিক থেকে টানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে বিএনপিকে ফাঁকা মাঠে ছাড়েনি আওয়ামী লীগ। তাদের সব কর্মসূচির দিনই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল ক্ষমতাসীনরাও। ‘শান্তি সমাবেশের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন করা হতো। সম্প্রতি রাজশাহীর এক বিএনপি নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার হুমকি’ দেওয়ার পর ‘শান্তি সমাবেশের’ পরিবর্তে ‘প্রতিহত’ করার ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। এরই মধ্যে আসে আমেরিকার ভিসানীতির ঘোষণা। এদিকে ভিসানীতির ঘোষণার পরে আবার আগের মতো ‘শান্তি সমাবেশে’ কমর্সূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি এখন পায়ে পা দিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা কাউকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে দেবো না। আমরা সতর্ক থাকব। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকব। এ বিষয়ে আমাদের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।