পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) অর্থের বিনিময়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক নিয়োগ পেয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আর একই সময় মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ মণ্ডল আত্মহত্যা করেন। তিনিও একই পদে নিয়োগ চেয়েছিলেন। তার স্বজনরা অভিযোগ করছেন, মেধার বদলে অর্থের জোরে নিয়োগ মেনে নিতে না পেরে এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের বর্তমান সহকারী অধ্যাপক মো. রফিক উদ্দিন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীন হোসেনের কাছে টাকা দিয়ে তিনি শিক্ষক পদে চাকরি বাগিয়ে নেন। প্রতিদিনের সংবাদের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ২০১৮ সালে পবিপ্রবির সাবেক বিতর্কিত ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুনর রশীদের আমলে এ ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো দুজন শিক্ষকের জড়িত থাকার আভাস পাওয়া গেছে। নিয়োগ কেলেঙ্কারির এ ঘটনা পরিচিত এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপকালে অবলীলায় স্বীকার করেছেন অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক রফিক উদ্দিন। যার অডিও ক্লিপ প্রতিদিনের সংবাদের এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
অডিওতে রফিক উদ্দিন স্বীকার করেন, শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে তিনি একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীন হোসেনের কাছে টাকা তুলে দেন। শাহীন হোসেনই কাজটি করিয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজে অন্য কোথাও যাননি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, তার সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশ শিক্ষক এখনো সহযোগী অধ্যাপক শাহীন হোসেনের অনুগত এবং সব সময়ই তার সঙ্গেই যোগাযোগ রক্ষা করেন। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিয়োগ পাওয়ার সিস্টেমটাই এমন ছিল বলেও দাবি করেন মো. রফিক উদ্দিন। নিয়োগ পেতে শাহীন হোসেনকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন দিতে হয়েছে। এদিকে একই সময় আত্মহত্যা করেন মেধাবী শিক্ষার্থী দেবাশীষ মণ্ডল। একই পদের তিনিও প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু নিয়োগ না পাওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন বলে দাবি তার স্বজনদের।
২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল পবিপ্রবির বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এতে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক পদে চাকরি প্রার্থী হিসেবে মৌখিক পরীক্ষায় যোগ দেন ছয়জন। যেখানে ফলাফলের দিক থেকে রফিক উদ্দিনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন দেবাশীষ। নিয়োগ পান রফিক। এর পরপরই আত্মহত্যা করেন দেবাশীষ মন্ডল। মূলত দুর্নীতির কারণে নিয়োগ বঞ্চিত হয়েই দেবাশীষ আত্মহত্যা করেন বলে দাবি তার পরিবারের।
এ বিষয়ে প্রতিদিনের সংবাদের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় দেবাশীষ মন্ডলের ছোট ভাই আশীষ মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, পবিপ্রবির শিক্ষক শাহীন হোসেন, নওরোজ জাহান লিপি ও অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামানসহ কয়েকজনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে নিয়োগ বঞ্চিত হন তার ভাই।
নিয়োগের জন্য তার ভাইয়ের কাছেও তৎকালীন সময়ে প্রথমে ১০ লাখ ও পরে আরো পাঁচ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। প্রথম ১০ লাখ টাকা জোগাড় করলেও পরের পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করতে দেরি হয়। আর এ কারণেই তার ভাই নিয়োগ পাননি। পরে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে ওই পদে রফিক উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শিক্ষক মো. রফিক উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। একটি কুচক্রি মহল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বর্তমান সময়ে তো কত কিছুই তৈরি করা যায়। এ ব্যাপারে আরেক অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীন হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমাকে হয়রানি করার জন্য একটি পক্ষ এসব ছড়াচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সামগ্রিক দুর্নীতি তদন্তে একটি কমিটি করা হয়েছে। সেখানে এ বিষয়টিও রয়েছে। গঠিত কমিটি সবকিছু তদন্ত করবে।