শনিবার, ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -১.৬১°সে

ইউরোপের শ্রমবাজার: দশ লাখ কর্মীর চাকরির সম্ভবনা

অনলাইন ডেস্ক: ভাষা শিক্ষাসহ দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করা সক্ষম হবে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভাষাসহ দক্ষ প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলা ড্রিম প্রকল্পের আওতায় ৪জন দক্ষ বাংলাদেশি কর্মী আজ বৃহস্পতিবার ভোরে ইতালির রোমে পৌঁছেছে। আগামীকাল শুক্রবার থেকে এসব কর্মী দেশটির রোমস্থ একটি গামেন্টস ফ্যাক্টরির লিংকিং অপারেটর হিসেবে নির্ধারিত কর্মস্থলে যোগদান করবে। এসব কর্মী দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা বেতন পাবে। ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসে দীর্ঘদিন যাবত ১ লাখ ১০ হাজার ভিসা প্রত্যাশী ভিসা না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। এসব কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে সহজীকরণে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া জরুররি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ৯ মাস ট্রেনিংসহ তাদের দেশটিতে যেতে অভিবাসন ব্যয় হয়েছে তিন লাখ টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আগামীতে ভাষাসহ ট্রেনিং সম্পন্ন করে ইউরোপে যেতে কর্মীদের শুধু ট্রেনিং এর খরচ বহন করতে হবে। তখন এতো টাকা অভিবাসন ব্যয় লাগবে না। বাংলা ড্রিম প্রকল্পের চার জন লিংকিং অপারেটর মধ্যে রয়েছে কিশোরগঞ্জের রুবেল মিয়া, ময়মনসিংহের রাজিব মিয়া ও মনির হোসেন, পঞ্চগড়ের মাহিদুর রহমান। এই চার জন দক্ষকর্মী হিসেবে ইতালিতে প্রথম যাত্রা শুরু করলো।
এদিকে, ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসে দীর্ঘ দিন যাবত ১ লাখ ১০ হাজার ভিসা প্রত্যাশী বাংলাদেশি কর্মী ভিসা না পেয়ে চরম দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। এসব ভিসা প্রত্যাশী কর্মীর পরিবার পরিজন চরম উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। ইতালি সরকারের শ্রমআইন অনুযায়ী এসব বাংলাদেশি কর্মী বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা লাভ করবে। ইতালিয়ান ভাষা ও ইউরোপীয়ান স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে কর্মীদের প্রস্তুত করার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কমপক্ষে ১০ লক্ষ বাংলাদেশি কর্মীকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করা সক্ষম হবে। যার ধারাবাহিকতায় বাংলা ড্রিম প্রকল্পের আওতায় ৪জন দক্ষকর্মী ইতালিতে নিরাপদে পৌঁছেন ।

ইতালিয়ান কোম্পানীর চাহিদা মোতাবেক ইতালিয়ান শ্রমমন্ত্রণালয়ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত বিদেশ হতে আগত নাগরিকদের স্বদেশে ইতালিয়ান ভাষা, কারিগরি প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক সচেতনতার উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে ইতালিয়ান মালিকের চাহিদা অনুসারে কর্মী নিয়োগের প্রকল্প হচ্ছে বাংলা ড্রিম। ইতালবাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতির সভাপতি শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, দক্ষ জনশক্তি মাধ্যমে ইউরোপে কর্মী প্রেরণের পথ সুগম করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে একযোগে কাজ করার জন্য ইতিমধ্যেই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)র সাথে ট্রেনিং সেন্টার সমূহে (টিটিসি) আমাদের এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আগামী দিনে বাংলাদেশের তরুণ সমাজের জন্য ইউরোপের বাজারে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ভাষাসহ কর্মীদের দক্ষতা অর্জন করাতে পারলে আগামী ৫ বছরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দশ লাখ বাংলাদেশি কর্মীকে প্রেরণ করা সম্ভব হবে। এতে রেমিট্যান্স আয়েও অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে। বিএমইটির সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬৭ জন নারী পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাস্থ ইতালি দূতাবাসে দেশটিতে কৃষি খাতসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রত্যাশী অভিবাসী কর্মীরা দীর্ঘ ৬/৭ মাস অপেক্ষার পরও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পাওয়ায় নানাবিধ ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। দ্রুত অ্যাপয়েন্টমেন্ট চালুর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটাতে ইতালি ও বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনাসহ ইউরোপের যেকোন দেশে যাবার পূর্বে ভাষা এবং কারিগরি প্রশিক্ষণের উপর জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ)। বাংলাদেশ মাইগ্রেশন ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিএমডিএফ) এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন জয় আজ ইনকিলাবকে বলেন, ল্যাঙ্গুয়েজ, ভোকেশনাল ও কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অধিকতর জনপ্রিয় করতে এবং প্রশিক্ষণার্থী সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহকে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা গ্রহণের মাধ্যমে একজন দক্ষ কর্মী হিসেবে তার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রবাসী ও অভিবাসী ইস্যুকে সমান গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় আনতে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, বর্তমানে ইউরোপে প্রায় এক কোটি শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপে যাচ্ছেন তারা নিজেদেরকে সঠিকভাবে প্রস্তুত না করেই সেখানে যাচ্ছেন। যার ফলে সেই শ্রম বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেখানে এক কোটি লোকের ঘাটতি অন্যদিকে প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দক্ষতা ও ভাষা জানা শ্রমিকের অভাব থাকার কারণে ইউরোপের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারটিকে আমরা পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি। ঢাকাস্থ ইতালিয়ান দূতাবাসে প্রায় এক লাখ দশ হাজার ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীর ভিসা আটকে পড়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জয়নাল আবেদীন জয় অবিলম্বে এসব ভিসা প্রত্যাশীদের দ্রুত ভিসা ইস্যু করে দেশটিতে যাওয়ার সুব্যবস্থা করার জোর দাবি জানান। জয়নাল আবেদীন জয় ইতালিতে ভাষা জানা দক্ষ কর্মী প্রেরণের প্রথম গ্রুপ আজ বৃহস্পতিবার ভোরে রোমে পৌঁছায় ইতালবাংলার সভাপতি শাহ মো. তাইফুর রহমানকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ইতালি বাংলা সমন্বয় উন্নয়ন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশের প্রবাসী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহ মোহাম্মদ তাইফুর রহমান বলেন, বর্তমানে ঢাকায় ইতালিয়ান দূতাবাসের চলমান ভিসা সঙ্কট শুধুমাত্র দক্ষ জনবলের অভাবে। সেখানে এক সাথে এক লাখের উপরে ওয়ার্ক পারমিট বাংলাদেশে আসার কারণে বিশাল পরিমাণে ভিসা আবেদন জমা হয়েছে। দূতাবাসের জনবল সঙ্কটের কারণে ভিসা প্রসেসিং ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ইতালি গমনেচ্ছু কর্মীদের দূতাবাস থেকে দ্রুত ভিসা ইস্যুতে বাস্তবমুখী উদ্যোগ নেয়ার জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

গাইবান্ধায় বিএনপি-জামায়াতের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত-১৪
রাখাইনে গুরুত্বপূর্ণ সেনা দপ্তর দখল করলো আরাকান আর্মি
আমরা আল্লাহর ওপরে ভরসা করি, হাসিনার ভরসা ভারত: দুলু
১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
১৯ নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
পলাশবাড়ীতে ৫ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

আরও খবর