পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার গলাচিপা উপজেলা পরিষদ চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে ইউএনওর বিরুদ্ধে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।
এদিকে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একদল স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন কেন্দ্রীয় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি, সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
তিনি বলেন, এটি দুঃখজনক। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে ইউএনওর বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ করছে। এর আগে ২০-২৫ জন ছাত্রকে নিয়ে কর্মসূচি করানো হয়েছে। তার আগেও কিছু লোক তাকে ‘ইসলামের শত্রু’, ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’, ‘জাতির শত্রু’ বলে আখ্যায়িত করে আন্দোলন করেছে। এসব শব্দ শুনলেই বোঝা যায়, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা।
ভিপি নুর আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর কিছু সুবিধাবাদী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে, যারা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যায়। কিন্তু যখন তাদের চাওয়া পূরণ হয় না, তখন তারা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আমার জানা মতে, ইউএনও মিজানুর রহমান স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বয় করে উন্নয়নে কাজ করছেন এবং এতে এলাকার জনগণ সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, যারা প্রশাসনকে অকার্যকর প্রমাণ করতে চায়, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা উচিত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদকসেবন ও বিক্রির অভিযোগ রয়েছে, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, আন্দোলনকারীদের অধিকাংশ এক সময় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং বর্তমানে নিজেদের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
সম্প্রতি গলাচিপায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ দেওয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, মানববন্ধনে অংশ নেওয়া কিছু ব্যক্তি আবেদনকারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে মনোনীত করতে ইউএনওর ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু ইউএনও নীতিগত কারণে এতে রাজি না হওয়ায় তারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এছাড়াও ডিলারশিপ না পাওয়া কিছু ব্যক্তি এ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেলা পর্যায়ের সমন্বয়ক তোফাজ্জল হোসেন বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তাদের মধ্যে কয়েকজন আমাদের সঙ্গে ছিল, কয়েকজনকে আমরা চিনি না। তবে মাদকাসক্তরা ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কয়েকজন এখানে ছিল বলে শুনছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করব।
গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সত্তার চেয়ারম্যান বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা উচিত। যেসব ব্যক্তি ডিলারশিপ পাননি, তারা হয়তো আন্দোলনে গেছেন। আমরা লটারির ভিত্তিতে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম, কিন্তু কমিটির সিদ্ধান্তে তা হয়নি। তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে অন্যায় সুবিধা নিতে চায় এবং প্রশাসন রাজি না হয়, তাহলে সেটাকে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ করা অনৈতিক।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ডা. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। তবে কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যদি মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, সেটি দুঃখজনক।
গণঅধিকার পরিষদের উপজেলা পর্যায়ের এক নেতা বলেন, যেকোনো আন্দোলন জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য হওয়া উচিত, ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য নয়। গলাচিপা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রেখেই কাজ করছেন।
এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, সরকারি প্রকল্পের কাজ কিংবা ডিলারশিপ প্রদান সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে করা হয়। কোনো অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল আমার কাছে অবৈধ সুবিধা চেয়েছিল, যা আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। এরপর থেকেই তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জনগণকে অনুরোধ করব, বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলেন, ইউএনও মিজানুর রহমান গলাচিপায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। তবে কিছু মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ইউএনওর পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।