সম্পাদকীয়
সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশের বাজারব্যবস্থা। বলা যায়, কোনো নিত্যপণ্যের ব্যবসাই এখন আর সিন্ডিকেটমুক্ত নেই। আলুর বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে গত কয়েক মাস ধরেই। বোঝা যাচ্ছিল এক্ষেত্রেও কারসাজি আছে। গতকাল যুগান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলুর বাজারে অস্থিরতার কারণ হিমাগার-মজুতদার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।
সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১০ টাকা ৫০ পয়সা। কৃষক তা বিক্রি করেন সর্বোচ্চ ১৫ টাকায়। এক্ষেত্রে খুচরা বাজারে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩২ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। অথচ বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়, আর পাড়া-মহল্লার দোকানে ৫০ টাকায়।
জুনে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫৫ টাকায় উঠেছিল। অথচ দেশে আলু একটি উদ্বৃত্ত সবজি। চাহিদার চেয়ে ২০ লাখ টন বেশি আলু উৎপাদিত হয়। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে আলুর মজুত রয়েছে পর্যাপ্ত। আমদানিকৃত পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ বিভিন্ন মসলাজাতীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হলেও আলুর ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। তারপরও চলছে কারসাজি। জানা যায়, হিমাগার থেকে চাহিদা অনুযায়ী আলু খালাস না করে বাজারে এর সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে আলুর মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। এ কারসাজি বন্ধ করা জরুরি।
আলু পচনশীল শস্য হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যতে ভালো দাম পাওয়ার আশায় তা সংরক্ষণ করে রাখেন হিমাগারে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের কারসাজি রয়েছে। তাদের সিন্ডিকেট সক্রিয়। এ সিন্ডিকেট অকার্যকর করার জন্য প্রয়োজন আলুর বাজারে সরকারি হস্তক্ষেপ। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে আলু সংরক্ষণ ও মজুতের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষক ও ভোক্তাদের স্বার্থে সরকারকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আলু দেশের তৃতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। চাল ও গমের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য আলু হতে পারে বিকল্প খাদ্য। কিন্তু এটিও সিন্ডিকেটের কবলে পড়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ভোক্তা পর্যায়ে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হলে সবার আগে এর সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে। অসাধু আলু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা এবং কোল্ডস্টোরেজ থেকে বাজারে আলু খালাসের ধীরগতির অবসান ঘটাতে হবে।