অনলাইন ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রনেতা, বিশিষ্ট সংগঠন, রাজনীতিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান সালু আর নেই। তিনি মঙ্গলবার ৫ ডিসেম্বর ভোর ৪টা ৫০ মিনিটে নিউ জার্সির সেন্টমেরী হসপিটালে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নানিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মরহুমের নামাজে জানাজা বুধবার বাদজোহর (দুপুর ১টায়) নিউ জার্সির পেটারসনের জালালাবাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির চেয়ারম্যান ও ফোবানা’র সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান সালুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি তার ক্যান্সার রোগ ধরা পড়ে। এরপর থেকেই তার চিকিৎসা চলছিলো এবং তিনি চিকিৎসকের পরামর্শে নিয়মতি কেমো নিচ্ছিলেন। তিনি নিমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে গত ৩০ নভেম্বর শনিবার তাকে নিউজার্সীর প্যাসিক সিটির একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
আতিকুর রহমান সালুর জন্ম টাঙ্গাইলে ১৯৪৮ সনে। হাই স্কুলের শেষ প্রান্তে নিউ ক্লাশ টেনে পড়াকালে সমগ্র হাই স্কুলের জেনারেল ক্যাপ্টেন এবং পরবর্তীকালে মধ্য ষাট দশকে টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী করটিয়া কলেজ (বর্তমানে সা’দত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) ছাত্র সংসদের এজিএস এবং সেখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন ও পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও পরবর্তীতে আইনে ডিগ্রী লাভ। এর মাঝে ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সনের টাঙ্গাইলের প্রতিটি ছাত্র আন্দোলনে তথা ঢাকা সহ তৎকালীন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী ছাত্র-গণ আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান ও কারাবরণ। ক্রমান্বয়ে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের তৎকালীন টাঙ্গাইল মহুকুমা-তথা টাঙ্গাইল জেলার সাধারণ সম্পাদক, সভাপতি পদ ও পরবর্তীকালে অভিবক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং পরবর্তীকালে সংগঠনের (মেনন গ্রুপ) সাংগঠনিক সম্পাদক, পর্যায়ক্রমে পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন তথা বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।
পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারী ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত লক্ষ লোকের সমাবেশে স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের প্রস্তাব হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান সালু। ১৯৭১ সনে মুক্তিযুদ্ধ সময়ে ভারতে অন্তরীণ মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি করে বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি নামে যে কমিটি গঠিত হয় তিনি ছিলেন সেই কমিটিরও কেন্দ্রীয় সদস্য। বিভিন্ন সময় পট পরিবর্তনের হাওয়াতেও আতিকুর রহমান সালু আদর্শচ্যুত হননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও ফারাক্কা লং মার্চের মহানায়ক মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সান্নিধ্যে থেকে দেশ ও জনগণের জন্যে নির্লোভভাবে কাজ করে গেছেন। ১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চে অংশ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে ২০০৫ সালের ৪ঠা মার্চ আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটির উদ্যোগে উজানে ভারতের এক তরফা পানি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে ও আমাদের নদী পানির অধিকার রক্ষা ও আদায়ের জন্য কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারীতে অনুষ্ঠিত লং মার্চেও অন্যদের সাথে নিয়ে নেতৃত্ব প্রদান করেন, যেখানে ৫ লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটে।
তিনি এক দিকে কবি, গীতিকার, সুরকার, লেখক, অ্যাক্টিভিষ্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকুর রহমান সালু মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বেঙ্গল টাইমস অনলাইন নিউজ পোর্টাল পত্রিকার সম্পাদক মাসুদ আলম চৌধুরী।