অনলাইন ডেস্ক :
লেবাননভিত্তিক শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। শুক্রবার টিভিতে দেওয়া ভাষণে তিনি ইসরাইলের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ঘোষণা দেননি। তবে হুমকি দিয়েছেন, যদি ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন না থামায় তাহলে এ যুদ্ধে জড়িত হবে হিজবুল্লাহ। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের চালানো হামলার প্রশংসা করেন তিনি।
ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ হারানো হিজবুল্লাহর যোদ্ধাদের স্মরণ করে তিনি তার বক্তব্য শুরু করেন।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিমতীরে যারা নিহত হয়েছেন তাদেরও স্মরণ করেন তিনি। এছাড়া গত ৭ অক্টোবর হামাসের যেসব যোদ্ধা ইসরাইল ঢুকে হামলা চালান তাদের অভিনন্দন জানান তিনি।
এরপর ইসরাইলের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইরাকের ও ইয়েমেনের যেসব সশস্ত্র গোষ্ঠী যোগ দিয়েছে তাদের ধন্যবাদ জানান নাসরুল্লাহ।
তিনি বলেন, হামাস গত ৭ অক্টোবর যা করেছে; ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যকে কাঁপিয়ে দিতে এমন কিছু একটার দরকার ছিল।
কারণ গত কয়েক বছরে ফিলিস্তিনদের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। বিশেষ করে ইসরাইলের বর্তমান চরমপন্থি, বোকা এবং বর্বর সরকারের কারণে ফিলিস্তিনিরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল।
তিনি আরও বলেছেন, হামাসের চালানো আল-আকসা ফ্লাড অপারেশনের প্রভাবে ইসরাইলে ভূমিকম্প হয়েছে। যার প্রভাব বর্তমান এবং ভবিষ্যতেও দীর্ঘদিন থাকবে।
এছাড়া ইরান যে কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয় না— ওইদিন হামাসের হামলার মাধ্যমে এটি প্রমাণিত হয়েছে। কারণ হামাসের নেতৃবৃন্দই এই হামলার সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসান নাসরুল্লাহ তার বক্তব্যে আরও বলেন, এখনো কিছুই শুরু হয়নি তার আগেই বিশ্বের অনেক দেশের প্রেসিডেন্ট, মন্ত্রী, সেনা কর্মকর্তা অবৈধ ইসরাইলে এসেছেন এবং আর্থিক সহায়তা পাঠাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেছেন, হামাসের এ হামলার মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নতুন ধাপ শুরু হয়েছে। হামাসের হামলাকে তিনি সঠিক, বুদ্ধিমান এবং সাহসী হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ঠিক সময়ে হামাস এই হামলা চালিয়েছে।
শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রধান নাসরুল্লাহ বলেছেন, ইসরাইল এখন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে; যেগুলো তারা কখনো অর্জন করতে পারবে না। আর এটি হচ্ছে যুদ্ধের সবচেয়ে ভুল সিদ্ধান্ত।
তিনি জানিয়েছেন, হামাস যেসব ইসরাইলিকে ধরে নিয়ে এসেছে তাদের আলোচনার মাধ্যমে ইসরাইল ফিরিয়ে নিতে পারবে।
তিনি বলেছেন, বর্তমানে গাজায় ইসরাইলি বাহিনী যে বর্বরতা চালাচ্ছে এর মাধ্যমে তাদের ‘নির্বুদ্ধিতা’ ও ‘অক্ষমতা’ প্রকাশ পাচ্ছে। তারা হামলা চালিয়ে শুধুমাত্র নারী ও শিশুদের হত্যা করছে। কিন্তু গত এক মাসে গাজায় একটি সামরিক লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি ইসরাইল।
তিনি এই যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন যুদ্ধের জন্য ইসরাইলকে ব্যবহার করছে মার্কিনিরা।
হাসান নাসরুল্লাহ এ যুদ্ধকে ‘ভিন্ন’ যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, এর আগে কখনো এ অঞ্চলে এ ধরনের যুদ্ধ দেখা যায়নি।
এরপর তিনি জানান, এ যুদ্ধে তাদের লক্ষ্য হলো গাজায় হামলা বন্ধ করা এবং হামাসকে বিজয়ী করা।
তিনি গাজার যুদ্ধ বন্ধে আরব বিশ্বের নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
দীর্ঘ বক্তব্যের এ পর্যায়েও হিজবুল্লাহর করণীয় বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা কি করবেন এ ব্যাপারে কোনো ধারণা বা ইঙ্গিত দেননি হাসান নাসরুল্লাহ।
তবে তিনি এরপর জানান হিজবুল্লাহ গত ৮ অক্টোবর থেকে এ যুদ্ধে জড়িত হয় এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এ কারণে গাজায় যাওয়ার বদলে লেবানন সীমান্তে ইসরাইলি সেনাদের অবস্থান করতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, হিজবুল্লাহ এ যুদ্ধে আরও জড়িত হবে। এ সময় নিজেদের ৫৭ যোদ্ধা নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেন নাসরুল্লাহ।
তিনি হুমকি দেন, হিজবুল্লাহর যুদ্ধে আরও জড়িত হওয়ার বিষয়টি ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করবে।
নাসরুল্লাহ জানান, তারা সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছেন এবং হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ শুরুর পর ভূমধ্যসাগরে যুক্তরাষ্ট্র যে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে এতে হিজবুল্লাহ ভয় পায় না।
তিনি জানান, যারা এই যুদ্ধ একটি আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হওয়া থেকে আটকাতে চান— তারা যেন গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধে কাজ করেন।