নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশ (টিসিবি) বাজারে হস্তক্ষেপ করে কম দামে বা ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করে থাকে, যাতে বাজারে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিমভাবে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে না পারেন।
মূলত এ উদ্দেশ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন এ সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কারণে সীমিত আয়ের মানুষের একটি ভরসার স্থল টিসিবি। অথচ সংস্থাটি এখন নিজেই বাড়িয়ে দিয়েছে সয়াবিন তেল, চিনি ও পেঁয়াজের দাম। বিষয়টি খুবই পরিতাপের।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে কয়েকটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছিল। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-চিনি, মসুর, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ ইত্যাদি।
রমজান ও রমজানপূর্ব সময়ে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা। কারণ অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজান মাস আসার আগেই বাজারে এসব পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে রমজান আসার আগে টিসিবির পণ্যের দাম বাড়ানো হলো কেন তা বোধগম্য নয়। বাজারে এর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অবশ্য সবকিছুর মতো টিসিবিও এ ক্ষেত্রে যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। তারা বলছে, মাঝে মাঝে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কেনা মূল্যের দিকে তাকিয়ে বিক্রির ক্ষেত্রে পণ্যের দাম সমন্বয় করতে হয়। আমরা মনে করি, রমজানের আগে এ যুক্তি ধোপে টেকে না। কারণ রমজান সামনে রেখেই টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। রমজান মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য একটি বিশেষ মাস। এ মাসে ইফতার ও সেহরি দুটি অতিরিক্ত খাদ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত হয় রোজাদারদের ক্ষেত্রে।
আর তাই প্রয়োজন পড়ে কতগুলো বিশেষ খাদ্যপণ্যের। অথচ আমরা দেখি একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি রমজানে কৃত্রিমভাবে এই বিশেষ পণ্যগুলোর দাম বাড়িয়ে দেয়। এর বিপরীতে টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে ছয় পণ্য বিক্রির যে উদ্যোগ নিয়েছে, আমরা মনে করি তার সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত।
শুধু তাই নয়, এ কার্যক্রম শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, গ্রাম পর্যায়েও বিস্তৃত করতে হবে। এজন্য পণ্যের পরিমাণ বাড়ানোর প্রয়োজন পড়লে তাও বাড়াতে হবে। মোট কথা, অধিকসংখ্যক ভোক্তার কাছে পণ্যগুলো পৌঁছানোর জন্য সেগুলোর পর্যাপ্ত পরিমাণ বরাদ্দ থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, যেসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, সেসব পণ্যের মান যাতে ভালো হয়, সেদিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত।