মমিনুল ইসলাম মোল্লা মুরাদনগর কুমিল্লা প্রতিনিধি।।
মুরাদনগরে সফলতার নতুন দিগন্ত!কুমিল্লার মুরাদনগরে এক ব্যতিক্রমী সাফল্যের গল্প তৈরি করেছেন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থী কাজী নাজমুল ইসলাম। পড়াশোনার পাশাপাশি ১০ শতাংশ জমিতে আঙুর চাষ করে তিনি রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, যা এলাকায় প্রথম। তার এই উদ্যোগ শুধু সফলই হয়নি, বরং স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছে।
স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন ছোট্ট থেকেই মুরাদনগরের যাত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতেই তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি বেছে নেন আঙুর চাষ। তার বাগানে ডিক্সন, বাইকুনুর, একেলো, গ্রিনলং, ভ্যালেজ — এমন সব ভিন্ন জাতের আঙুর ফলছে।
নাজমুল জানান, তিনি বাগান থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে অর্গানিক আঙুর বিক্রি করছেন। মানুষ নিজের হাতে গাছ থেকে তাজা ফল পেড়ে নিতে আসছেন এবং বেশি দাম দিতেও পিছপা হচ্ছেন না। এই বাগানে প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে, চাহিদা এতটাই বেশি যে, সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কিছু ফল বিক্রির পর আবারও পাকা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বেকারত্ব দূরীকরণে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তরুণ উদ্যোক্তা নাজমুলের মতে, তার মতো আরও শিক্ষার্থীরা যদি চাকরির পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হয়, তাহলে দেশের বেকারত্ব বহুলাংশে কমে আসবে এবং অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। তার এই উদ্যোগ দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
মুরাদনগরের উপজেলা কৃষি বিভাগ নাজমুলের এই প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বাগান পরিচর্যা, রোগবালাই দমন, সেচ ও সার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
নাজমুলের বাবা তাজুল ইসলাম তার ছেলের সাফল্যে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বলেন, “আমার ছেলে আঙুর চাষ করে সফলতা অর্জন করেছে। তার আগ্রহ দেখে আমি খুব খুশি।” স্থানীয় ব্যবসায়ী আবু ইউসুফও নাজমুলের প্রশংসা করে বলেন, “নাজমুলকে দেখে এলাকার যুবসমাজ অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তার এমন উদ্যোগে আমাদের এলাকার সবাই প্রশংসা করছে।”
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. পাবেল খান পাপ্পু মন্তব্য করেন, “নাজমুলকে সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে আমরা সহযোগিতা করছি। তার মতো অন্য শিক্ষার্থীরা যদি এভাবে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠে, তাহলে আমাদের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। তাছাড়া মানুষ হাতের নাগালে অর্গানিক ফল পাবে।”
কাজী নাজমুল ইসলামের এই সাফল্য শুধু তার ব্যক্তিগত নয়, এটি পুরো অঞ্চলের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক উদ্যোগ, পরিশ্রম আর কৃষি বিভাগের সহযোগিতা থাকলে আমাদের যুবসমাজ নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।