তালিকায় রয়েছে আমলা, পুলিশ, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী
অনলাইন ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্র ৫১ জন বাংলাদেশির ভিসা বাতিল করেছে। এ কার্যক্রম গত তিন মাসের। যাদের ভিসা বাতিল করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও শিল্পী। এদের সবার নামেই যুক্তরাষ্ট্রে আসার মাল্টিপল বা অন্য ভিসা মঞ্জুর করা ছিল। এদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘন, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান, রাজনীতিতে গডফাদার হিসেবে আচরণ প্রভৃতি অভিযোগ আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যায়ের একজন নেতাও এর মধ্যে রয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক রাষ্ট্রদূতকে শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ডিওএইচএস-এ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে হামলার ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তা সর্মথন করে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুই জনের ভিসা বাতিল হয়েছে। তাদেরকে দূতাবাস চিঠি দিয়ে ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির এক নেতা মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়ার্ল্ড ব্যাংকে আগমন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য ভিসার আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার তাগিদ দিয়ে আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত ২৪ মে এ ঘোষণা দেয়া হলেও বাইডেন প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত নেয় এপ্রিলের প্রথম নাগাদ। বাংলাদেশ সরকারকে তা জানানো হয় ৩ মে। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস সংখ্যা উল্লেখ না করে বেশ কিছু বাংলাদেশির ভিসা বাতিলের কথা স্বীকার করেছে। দূতাবাসের মূখপাত্র বলেছেন, যাদের ভিসা বাতিল বা প্রত্যাহার করা হয়েছে তাদের অবহিত করা একটি সাধারণ রীতি। তবে নির্বাচন প্রশ্নে স্টেট ডিপার্টমেন্টের আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা অনুসারে এখনও কারও ভিসা আবেদন বাতিল করা হয়নি বলে তিনি জানান।
ভিসা বাতিল কিংবা ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হ্রাসের প্রতিশোধমূলক কিনা প্রশ্ন করা হলে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, স্টেট ডিপার্টমেন্টের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার প্রেক্ষিত একেবারেই ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ভালো বন্ধু। এ দেশটিতে মানুষ যেন গণতান্ত্রিক অধিকার নির্ভয়ে প্রয়োগ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র সেটাই দেখতে চায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আগাম ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ও অনেকের ভিসা বাতিলের খবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্বাভাবিক হারে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স যাওয়া শুরু হয়েছে। গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স গিয়েছিল ২.৮৭ বিলিয়ন ডলার। এ বছর উল্লেখিত দুই মাসে গিয়েছে ৩.০৫ বিলিয়ন ডলার। সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক মাহমুদা খাতুন বলেছেন, ট্রেন্ডটি আনইউজুয়াল। কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার বিষয়।
কমিউনিটিতে মানি একচেঞ্জ ব্যবসার সাথে জড়িত নিউইয়র্কের এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলেন, বৈধ পথের তুলনায় হুন্ডির মাধ্যমে কয়েক গুণ বেশি ডলার যাচ্ছে বাংলাদেশে। কার্যত গত কয়েক বছরে এই অর্থ বাংলাদেশ থেকেই এসেছিল। তা এখন আবার বাংলাদেশেই ফিরে যাচ্ছে। একটি অংশ যাচ্ছে কানাডা, মালয়েশিয়া কিংবা দুবাইয়ে। যে পথে এসেছিল, অর্থ আবার সে পথেই তারা নিয়ে যাচ্ছে। অর্থপাচারকারীরা আস্থার জায়গাটি হয়তো হারিয়ে ফেলছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।সূত্র- সাপ্তাহিক আজকাল