অনলাইন ডেস্ক :
ব্রিটেনে ভিসা প্রতারণার শিকার নিঃস্বদের আহাজারি ক্রমেই বাড়ছে। একদল কুচক্রী মহল দেশটির দক্ষ কর্মীর অভাবকে পুঁজি করে অনুন্নত দেশগুলো থেকে অবৈধ পথে জনবল নিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের কথামতো না চললেই হারাতে হচ্ছে সবকিছু। সম্প্রতি স্কাই নিউজের এক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, একজন নারী দাবি করেছেন, তিনি কেয়ার ওয়ার্কার হিসাবে ব্রিটেনে কাজের জন্য দক্ষকর্মী ভিসা পেতে শ্রীলংকায় কথিত নিয়োগকারী চক্রের হাতে ৬৫ হাজার পাউন্ড তুলে দেন। অন্য একজন নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তিনি কাজের ভিসায় লন্ডনে আসার সময় তার স্বামী এবং সন্তানের পরিচয় দিয়ে আরও তিনজনকে নিয়ে এসেছিলেন।
পরে ওই নারীকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে স্কাই নিউজ ওই ভুয়া পরিবারের সন্ধান পায়। তারা ওয়েস্ট মিডল্যান্ডসের স্টাফোর্ডশায়ারে বসবাসকারী ৪৮ বছর বয়সি শ্রীলংকার ধানচাষি রাথাকে খুঁজে পেয়েছে। তার মুখ থেকেই শোনা গেল প্রতারণার ধরনও একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। ব্রিটেনে যাওয়ার স্বপ্নে শ্রীলংকার চাষি রাথা কলম্বো বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছিলেন।
এমন সময় দালালচক্র এক অজ্ঞাত এক মহিলার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আপনি তার সঙ্গে না গেলে আপনার সমস্যা হবে এবং আপনার টাকা ফেরত দেওয়া হবে না।’ রাথা এ চক্রকে ব্রিটেনে চাকরিতে নিয়োগকারী ‘এজেন্ট’ হিসাবে বিশ্বাস করেছিলেন।
বাপ-দাদার সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি দিতে এজেন্টকে দিয়েছিলেন ৫০,০০০ পাউন্ড। যাওয়ার সন্ধিক্ষণে দালাল চক্র শর্ত দেন অজ্ঞাত মহিলার স্বামী পরিচয়ে পাড়ি জমাতে হবে যুক্তরাজ্যে। দালাল চক্রের একজন জানান, ‘আমি তাকে আপনার স্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়েছি। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যান।’ তাৎক্ষণিক রাথা বুঝতে পারেন ব্রিটেনের কর্মী ভিসা ব্যবস্থার অপরাধী চক্রের শিকার হয়েছেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই রাথার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় আরও একজনের নাম। লিভারপুলে বসবাসকারী ১৯ বছর বয়সি হিনথুজান। রাথার ছেলের ভূমিকায় রাখা হয় তাকে। কিশোর হিনথুজান কলম্বো বিমানবন্দর পর্যন্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত ধারণাই করতে পারেনি তার সঙ্গে কী ঘটতে চলেছে। এমনকি ইংরেজি বলতেও জানে না হিনথুজান। এক অনুবাদকের মাধ্যমে তিনি স্কাই নিউজকে জানান, ‘শ্রীলংকায় অনেক সমস্যা চলছে। সেখানে থাকা সম্ভব নয়। সেজন্যই আমি এসেছি।’ আমি ভয় পেয়েছিলাম যখন তারা (এজেন্ট) আমাকে বলেছিল, ‘আপনি যদি বলেন তারা আপনার মা এবং বাবা কোনো সমস্যা হবে না।’
অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীকে ফাঁদে ফেলা হয় অন্যভাবে। তাকে একটি নার্সিং কোম্পানির চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে কাজ করতে ইংরেজি জানা আবশ্যক হলেও দালাল চক্র তাকে ইংরেজি ছাড়াই ভিসা প্রদানে আশ্বস্ত করেছিল। এ চাকরির জন্য ঐ নারীর নামে ভুয়া নার্সিং ডিপ্লোমা, জীববিজ্ঞান এবং রসায়নের সার্টিফিকেট তৈরি করা হয়েছিল।
এক শ্রীলংকান নাগরিক বিনোথান তিন প্রজন্মের সম্পত্তি বিক্রি করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরিবার সারা জীবনের সঞ্চয় বিক্রি করে তিনিও সর্বহারা। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে সরকার যুক্তরাজ্যের কর্মী ভিসার আবেদন সহজ করে তোলে। গত বছর দক্ষ কর্মী ভিসায় বৈধভাবে যুক্তরাজ্যে এসেছে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।
ঋষি সুনাক ক্ষমতায় আসার পর ছোট নৌকায় করে অবৈধ পথে ব্রিটেনে আসার পথকে বন্ধ করে দেন। স্কাই নিউজের দাবি, বর্তমানে মানব পাচারের এ কাজ বৈধ পথেই করা হচ্ছে। অপরাধ চক্রগুলো ব্রিটেনে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজনে লোক নেওয়া হবে এ আশ্বাস দিয়ে প্রতারণায় ফেলছে সাধারণ মানুষকে। সেই সঙ্গে চাকরি পাওয়ার পর তাদের পরিবারকেও নিয়ে আসার ব্যাপারে আশ্বস্ত করছে তারা। কিন্তু এয়ারপোর্টে গেলেই বেধে যাচ্ছে বিপত্তি। কখনো স্ত্রী, কখনো স্বামী, কখনো কন্যা বা পুত্র পরিচয়ে অজানা কাউকে নিয়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।