রাঙামাটি প্রতিনিধি:
পাহাড়ে ড্রাগন ফলের বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই প্রায় সময় দেখা মিলছে রাঙমাটির পথ-পান্তরে ড্রাগন ফলের হাট। পাহাড়ে উৎপাদিত এসব ড্রাগন যতটাই না আকর্ষণীয় তার চেয়ে বেশি মজাদার। এ ফলের চাহিদা বেশি। তাই দামও বেশি। রাঙামাটির স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত হচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ আশপাশের জেলায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে ড্রাগন ফল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাঙামাটি কৃষি বিভাগ বলছে, বিদেশি ফল নেই এখন ড্রাগন। দেশের ভিন্ন জেলায় উৎপাদন হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। তার মধ্যে অন্যতম তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। অপরূপ সুন্দর লতানো গাছে কাঁচা-পাকা ড্রাগন ফলের ভরপুর এখন পাহাড়। নাইট-কুইন ফুলের মতো মধ্য রাতে ড্রাগন ফলের ফুল ফোটে। সকাল হওয়ার আগেই এ ফুল ফলে রূপান্তরিত হয়ে যায়। তাই সচরাচর ড্রাগন ফলের ফুল দেখার সৌভাগ্য হয় না অনেকের। বিদেশি প্রজাতীর এ দুর্লভ ফলের প্রথম উৎপাদন হয়েছে, রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে। আর এখন জেলার সবখানে মিলছে এ ড্রাগন।
শুধু তাই নয় ড্রাগন ফল চাষ করে ভাগ্য পরির্বতন করেছে অনেক কৃষি উদ্যোগতা। তার মধ্যে রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের মধ্যম পাড়ায় মিল্টন চাকমার গল্পটা একে বারেই ভিন্ন। ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় থেকে এসে রাঙামাটিতে নিজ উদ্যোগে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ শুরু করেন। প্রায় ২ একর পাহাড়ি জমিতে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করে শখের বাগান অর্থাৎ ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তুলেন তিনি। তার বাগানে ফল আসার পর তিনি যেমন লাভবান হয়েছেন কর্মস্থান হয়েছে বেকর যুবকদের।
ড্রাগন চাষী মিল্টন চাকমা জানায়, আমি এতোটা আশ করিনি। প্রথমবার পরীক্ষামূলক চাষ করে এমন সফলতা পাবো। এক কথা বলা যায় আমার বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে ড্রাগনের। প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে। এরই মধ্যে বাজারজাত করেছি ড্রাগনের। ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরা দরে বিক্রি করেছি রাঙামাটি বাজারে। এছাড়া চট্টগ্রামের পাইকারি ফল ব্যবসায়ীরাও বাগান থেকে ড্রাগন ক্রয় করে নিয়ে যায়। তাই আশা করছি বাগানের পিছনে যা খরচ হয়েছে তার চেয়ে বেশি লাভবান হব।
একইভাবে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন স্থানীয় নীল রতন চাকমা ও আনন্দ মনি চাকমা। তারা বলেন, মিল্টন চাকমার ড্রাগন বাগানের জন্য অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তাই আমরাও আশা রাখছি এভাবে ড্রাগন বাগান গড়ে তুলার। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে কাজ শুরু করব।
রাঙামাটি সাপছড়ি ইউনিয়ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মহসিন রহমান জানান, মিল্টন চাকমার ড্রাগন বাগান আমরা প্রায় সময় পর্যবেক্ষণ করেছি। তাকে বিভিন্ন পরার্মশ দিয়ে বাগানের যত্ন আর পরিচর্যা করতে বলেছি। তাই সঠিক সময় ফলন পেয়েছে। আন্তরিকতা থাকলে যে কোন কাজ সফল হয়। এখন তার লাভ গুনছেন মিল্টন চাকমা।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, এ বছর রাঙামাটি জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় এরই মধ্যে সফলতা পেয়েছে ড্রাগন চাষ। একটা সময় ড্রাগন ফল বাংলাদেশে তেমন একটা দেখা যেত না। বিদেশি জাতের এ ফলটি বাংলাদেশে অনেকটাই দুর্লভ। তবে দুর্লভ এ ফলের সফল উৎপাদন হয়েছে পাহাড়ে। কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানিরা দেশীয় আবহাওয়া, মাটি ও পরিবেশের ভারসাম্যকে কাজে লাগিয়ে ড্রাগন ফলে বাগান গড়ে তোলা ও ফলের সফল উৎপাদন নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। পাহাড়ে এখন সাদা ও গোলাপি রঙে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে। যদি সব চাষী সঠিক পদ্ধতিতে ড্রাগনের চাষাবাদ করা হয়। এ অঞ্চলের কৃষি অনেক সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করা যায়।