অনলাইন ডেস্ক:
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ন্যাটোর উদ্দেশে কড়া মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ন্যাটো সামরিক জোটে যোগদানের জন্য তার দেশকে কখন আমন্ত্রণ জানানো হবে, সে বিষয়ে কোনো রকম দিন-তারিখ নির্ধারণ না করাটা ‘অযৌক্তিক’ বিলম্ব। তিনি এ ঘটনায় বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন। ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে গতকালই লিথুয়ানিয়ায় পৌঁছান জেলেনস্কি। এদিকে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে যখন টানাপোড়েন চলছে, তখন জোটের ৩২তম সদস্য হতে যাচ্ছে সুইডেন।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি টুইটারে ইউক্রেনকে কখন আমন্ত্রণ জানানো হবে, কখন ইউক্রেন জোটের সদস্য হবে—এসবের সময়সীমা নির্ধারণ না করাটা নজিরবিহীন এবং অযৌক্তিক। তিনি বলেন, ‘কার্যত মনে হচ্ছে ইউক্রেনকে জোটে আমন্ত্রণ জানানো বা সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রস্তুতিই নেই।’ ন্যাটো ২০০৮ সালে বুখারেস্টের শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেনকে জোটের সদস্যপদ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু কখন এবং কীভাবে সেটা হবে, সে বিষয়ে নেটো কিছুই বলেনি। জেলেনস্কি বলেন, ‘এখন ভিলনিয়াসে সম্মেলন শুরুর আগে আমরা এমন ইঙ্গিত পাচ্ছি যে ইউক্রেনের উপস্থিতি ছাড়াই তারা এ ব্যাপারে কিছু বয়ান নিয়ে আলোচনা করছে।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে আরো বলেন, ‘এই বয়ান ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ নিয়ে, ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে নয়। অনিশ্চয়তা একটা দুর্বলতার লক্ষণ। শীর্ষ বৈঠকে আমি এ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলব।’ তবে জেলেনস্কি এটাও জানেন যে যুদ্ধ চলাকালীন ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানাতে পারে না। কারণ সেটা করলে ন্যাটো জোট রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধের ঝুঁকিতে জড়িয়ে পড়বে। যেহেতু ন্যাটো সনদের আর্টিকেল ফাইভে বিধান দেওয়া আছে যে জোটের কোনো সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে সেই দেশকে প্রতিরক্ষা দিতে সব সদস্য দেশকে এগিয়ে আসতে হবে।
লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে গুরুত্বপূর্ণ এক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে জড়ো হয়েছেন ন্যাটো সামরিক জোটের নেতৃবৃন্দ। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এবং পশ্চিমা এই জোটের ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারিত হতে পারে। জোটের ৩১টি সদস্য দেশ আশা করছে, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদে সামরিক সহায়তা দিতে তারা যে রাজি, সেটা তারা রাশিয়াকে বোঝাতে পারবে। যদিও ভবিষ্যৎ সদস্য হিসেবে ইউক্রেনের নিজস্ব উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে, জোটের কিছু সদস্য দেশ রাশিয়ার দিক থেকে ভবিষ্যৎ আক্রমণ ঠেকাতে কিয়েভকে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দেবে। তারা আরো অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও কথাবার্তা বলবে। তবে সদস্যপদ প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চান যে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব ন্যাটো যেন ইউক্রেনকে জোটে যোগ দিতে দেয়। কবে এবং কীভাবে সেটা করা হবে, তার স্পষ্ট পরিকল্পনা যেন তৈরি করা হয়। তবে অনেক সদস্য দেশ এতটা এগোতে নারাজ, বিশেষ করে আমেরিকা আর জার্মানি। তাদের ভয় ইউক্রেনকে সদস্য করার জন্য এতটা নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি এখনই দিলে রাশিয়া যুদ্ধ আরো তীব্র ও দীর্ঘায়িত করার অজুহাত পাবে।
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, চূড়ান্ত ইশতেহারের ভাষা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেন নিয়ে আমরা জোরালো একটা বার্তা দিতে পারব এবং আমরা যে একমত হব, সে বিষয়ে আমি স্থির নিশ্চিত।’ দুই দিনের এই বৈঠকে ন্যাটো নেতৃবৃন্দ ভবিষ্যৎ রুশ হামলা প্রতিহত করতে এবং ইউক্রেনকে রক্ষা করতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে একমত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তারা ইউক্রেনের পূর্ব দিকে ন্যাটো বাহিনীকে আরো জোরদারের বিষয়ে আলোচনা করবে।
ন্যাটোর এই শীর্ষ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ইউক্রেনকে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য জোট যে সামরিক সহায়তা জোগাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, সেটা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া। ন্যাটো কর্মকর্তারা আশা করছেন, এর ফলে রুশ নেতা পুতিন হয়তো তার ধ্যানধারণা বদলাতে শুরু করতে পারেন। হয়তো পশ্চিমা শক্তিকে কাবু করার ব্যাপারে তার মনে সন্দেহ তৈরি হতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শীর্ষ বৈঠকে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন বলে আমেরিকান কর্মকর্তারা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন।