আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। নদীমাতৃক এ দেশে নদীর অস্তিত্বের সঙ্গে জীবনযাত্রা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ভৌগোলিক স্বাতন্ত্র্য দেশটিকে যেমনভাবে বিশ্ব মানচিত্রে বিশেষভাবে পরিচিত করেছে তেমনি এ দেশের অধিবাসীদের আর্থসামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী প্রভাব রেখে চলেছে। বাংলাদেশে হিমালয় থেকে উৎপন্ন জলের ধারা প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। পথিমধ্যে বাংলা নামের এ জনপদকে সমৃদ্ধ করেছে অসংখ্য নদনদী দিয়ে। এ নদীর সঙ্গেই বিপুল জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা জড়িত রয়েছে। নদীপথ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মিশরের নীল নদ যেমন মিসরের প্রাণ, তেমনি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ।
বস্তুত নদীর অবদানেই প্রাণ পেয়েছে মানবসভ্যতা। এ নদীকে কেন্দ্র করে যুগে যুগে রচিত হয়েছে কালজয়ী গান। রচিত হয়েছে নদী ও নদীপাড়ের মানুষের জীবন সংগ্রাম নিয়ে ‘পদ্মা নদীর মাঝির’ মতো কালজয়ী উপন্যাস। বলা হয় ১৩০০ নদীর দেশ বাংলাদেশ। হাজারও নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র এগুলোর মধ্যে প্রধান। এছাড়াও অসংখ্য ছোট বড় নদী আছে এ দেশে। প্রতিটি নদীরই রয়েছে স্বাতন্ত্র্য। বাংলার জনপদগুলোকে পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে এসব নদী।
আমাদের অসচেতনতা এবং উদাসীনতার কারণে অনেক নদ-নদী আজ সংকটে, কোনো কোনো নদী আবার হারিয়ে গেছে, আবার কোনোটি নিজের গতি পরিবর্তিত করে বয়ে চলেছে। নদী ও মানবজাতি একে অন্যের ওপর বেশ প্রভাব বিস্তার করে। শরীরের রক্তধারার মতোই যেন বাংলাদেশের নদী এদেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা করে তুলেছে এদেশকে। পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে অনেক নদী হারিয়েছে তার যৌবন।
তাই এখনি সময় একত্রিত হয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া। আর নদীর অপব্যবহার নয়, এবারে সুস্থ করে তুলব নদীগুলোকে। এজন্য বাংলার প্রকৃতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির স্বার্থেই নদীগুলোকে রক্ষা করতে সবাইকে হতে হবে সচেষ্ট।