আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র চরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মরিচ গাছে শোভা পাচ্ছে থোকায় থোকায় সবুজ মরিচ গাছ। কিছু কিছু গাছে মরিচ আধা পাকা আকার ধারণ করেছে। হাট-বাজারে কাঁচা মরিচের মূল্য বেশি হওয়ায় চাষীরা বিক্রিও করছেন। তবে, সারা বছর মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় বেশিরভাগ চাষির পরিকল্পনা রয়েছে মরিচ পাকিয়ে শুকনো মরিচ বিক্রি করার।
কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী চলতি মৌসুমে রংপুর বিভাগে নদী ও চরাঞ্চল বেষ্টিত জেলা গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটে মোট মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১০ হাজার ৫শ হেক্টর জমি। তবে, মরিচের অধিক মূল্য ও বাজারে চাহিদা থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো বেশি চাষাবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার দিঘলকান্দি চরের শামসুল হক সরকার জানান, চলতি মৌসুমে দুই একর জমিতে মরিচের চাষ করেছি। ইতোমধ্যে একবার মরিচ তুলে বাজারে ৪ হাজার টাকা মনে বিক্রিও করেছি। তবে এখন আর তিনি কাঁচা মরিচ তুলবেন না বলে জানিয়ে বলেন, গাছের সব মরিচ পাকিয়ে শুকনো হিসেবে বিক্রি করবেন। ফুলছড়ি উপজেলার বাগবাড়ি চরের চাষি আব্দুল মালেক মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ফলে মরিচের চারা বড় হতে সময় লেগেছে এবং অনেক চাষী ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে। তবে, এখন তার এক বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচ বেশ ভালো হয়েছে। কাঁচা মরিচ তুলে তিনি বিক্রি করছেন। বেশ অর্থও পাচ্ছেন এবং উৎপাদন খরচ পুরণ করে তিনি লাভের দিকে যাচ্ছেন বলে জানান।
রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার পাওটানা গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, বেলে দোআশ মাটিতে মরিচ চাষ হয়। আর সারা বছর বাজারে দাম ও চাহিদা থাকায় উৎপাদন খরচ বেশি হলেও লোকসান হয় না।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া বলেন, চরের সবচেয়ে লাভজনক কৃষি ফসল হলো মরিচ। মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চরের বেশিরভাগ মানুষ মরিচ চাষে ঝুঁকেছেন। মরিচ কাঁচা ও পাকিয়ে শুকনো করে বিক্রি করা যায় বলে এর সংরক্ষণ ঝুঁকি কম বলে তিনি জানান।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্র (জিইউকে) এর নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস সালাম জানান, গাইবান্ধা জেলার ব্রান্ডিং ফসল শস্য মরিচ। জেলার মরিচের চাহিদা পূরণ হয়ে সারা দেশে চরাঞ্চলের মরিচ বিক্রি হয়ে থাকে। ক্রমেই চাষাবাদের পরিমাণও বাড়ছে। তবে নদীতে পানি না থাকায় যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতায়
হাটবাজারে মরিচ বিক্রি করতে পরিবহনে অধিক অর্থ গুণতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মার্কেট চ্যানেল তৈরি হলে চাষীরা উপকৃত হবেন।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম জানান, অর্থকারী ফসলের মধ্যে মরিচ অন্যতম। আর চরের মাটি মরিচ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বছর জুড়ে মরিচের বাজার মূল্য বেশি থাকায় চাষীরা ঝুঁকেছেন মরিচ চাষে। একারণে মরিচ চাষে চাষীরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ জানান, চরের মানুষজনের অন্যতম অর্থকারী ফসল এখন মরিচ। মরিচ চাষ করে চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি দেশের মরিচ ঘাটতিও পূরণ করছেন। এজন্য মরিচ চাষীদের উৎসাহ পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
Leave a Reply