সম্পাদকীয়
ডলারের একক দর ও বাজারে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) পক্ষ থেকে বিভিন্ন যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও অনেক ব্যাংককে তা মানতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে স্বভাবতই কঠোর অবস্থানে গেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাফেদা ও এবিবির যৌথ সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ব্যাংকগুলোর প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে নীতি-সহায়তা রয়েছে, তা আটকে দেওয়া হতে পারে। যুগান্তরের খবরে প্রকাশ, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বাফেদা ও এবিবির প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন কঠোর বার্তা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, অনেক ব্যাংক বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। এছাড়া গত ২২ অক্টোবরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্স কেনার ক্ষেত্রে ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল থেকে সর্বোচ্চ আড়াই শতাংশ এবং সরকারের আড়াই শতাংশ যোগ করে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। এভাবে ডলারের বাজারে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকগুলোর এমন কর্মকাণ্ডে অন্যান্য খাতেও ডলারের দাম বাড়ছে। ব্যাংকে নগদ ডলারের দাম ১১৬ টাকা হলেও খোলাবাজারে এর দাম বেড়ে দিনের শুরুতে সর্বোচ্চ ১২৬ টাকা ও শেষদিকে ১২৭ টাকায় বিক্রি হয়। কোথাও কোথাও এর চেয়ে বেশি দামেও বেচাকেনা হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দর এলাকায় নগদ ডলারের দাম বেশি। কারণ বিদেশে যাওয়ার সময় ক্রেতারা বিমান বা স্থলবন্দর থেকে নগদ ডলার কিনছেন। ফলে ওইসব স্থানে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রেমিট্যান্সের ডলারের দামে লাগাম টানতে রেমিট্যান্স কেনায় ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সা রাখার সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়েছে। তবে ব্যাংকের প্রণোদনার ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ থেকে কমিয়ে তা ২ শতাংশ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
আমরা দেখছি, গত ৩ সপ্তাহে রেমিট্যান্স কেনার ব্যাপারে বাফেদা ও এবিবি চার দফা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এতে ডলার বেচাকেনায় গ্রাহকদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আবার ব্যাংকাররা বলেছেন, বাফেদা ও এবিবির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ফলে বাজারে ভুল বার্তা যাচ্ছে। এতে বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়ছে। এমন অবস্থায় তারা ডলারের ব্যাপারে একক ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তে আসার প্রস্তাব দিয়েছেন। মনে রাখা দরকার, আইএমএফ ও অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও এ মুহূর্তে তা করলে বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠতে পারে। এ কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। অবশ্য বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ যেসব ব্যাংক বাড়তি দামে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার আদেশ দিয়ে রেখেছে, এখন দাম কমিয়ে অফার করলে তারা জোগান বন্ধও করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে বাজারে ডলার সংকট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার তাই এদিকেও দৃষ্টি দেবে, এটাই প্রত্যাশা।