আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টারঃ
এক সময়ে গ্রাম বাংলার মানুষের একমাত্র যোগাযোগের বাহন ছিল ঘোড়ার গাড়ি। সভ্যতার যুগ ও কালের বিবর্তনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার হারিয়ে গেলেও চরাঞ্চলে রয়েছে এর প্রচলন।
বর্ষার সময় চরাঞ্চলে যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা। তবে শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলের মালামাল বহনের একমাত্র বাহন হলো ঘোড়ার গাড়ি। এ কারণে চরবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল ঘোড়ার গাড়িযোগে বহন করে থাকেন
সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে চর জাগতে শুরু করে। চর জাগলেই শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি যোগাযোগের অন্যতম বাহন হয়ে দাঁড়ায়। গাইবান্ধায় ১৬৫টি চর ও দ্বীপচরে একমাত্র ভরসা এখন ঘোড়ার গাড়ি।
জেলার ফুলছড়ি চরাঞ্চলে প্রধান বাহন হিসেবে দিব্যি চলছে ঘোড়ার গাড়ি। নদীর পানি নেমে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, যমুনার চরাঞ্চলে নিত্য প্রয়োজনীয়, মালামাল পরিবহনে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার বেড়ে গেছে। শুকনো মৌসুমে চরবাসীর কষ্টের স্বপ্নের ফসল বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, বোরো ধানসহ নানা ফসল চরাঞ্চলে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিতে খুবই কষ্ট হয়ে থাকে। তাই এ কষ্ট লাঘবে ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করছে চর অঞ্চলের মানুষ।
চর রসুলপুর গ্রামের ঘোড়ার গাড়ি চালক মো. মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা কাম (কাজ) না করলে খাব কী? বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে খাই। সংসার চালানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ঘোড়ার গাড়ি চালাই। দৈনিক আয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় হলেও ঘোড়ার খাবারের জন্য ব্যয় করতে হয় ২০০ টাকা। বাকি টাকায় চলে সংসার।’
একই গ্রামের বাসু মিয়া বলেন, এক বছর আগেও এই চরে ১০-১২টি ঘোড়ার গাড়ি ছিল। কিন্তু এই অঞ্চলে এখন ৩০-৪০টি ঘোড়ার গাড়ি হয়েছে। তা ছাড়া বালাসিঘাটে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভিড় বাড়ায় দিন দিন ঘোড়ার গাড়ির চাহিদাও বাড়ছে।
ফুলছড়ির বালাসীঘাট এলাকার বাবু মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় চর। যার কারণে বালাসীঘাটের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাহন হিসেবে ঘোড়ার গাড়ি মানুষের একমাত্র ভরসা। এ ছাড়া চরের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল জমি থেকে বাড়িতে নেয়া কিংবা হাট-বাজারে বিক্রি করতে নদীর ঘাটে আনার মাধ্যম এ ঘোড়ার গাড়ি।