অনলাইন ডেস্ক:
কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি (যুদ্ধসমাধি) থেকে ২৪ জন জাপানি সৈনিকের সমাধি খনন কাজ নির্ধারিত সময়ে দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে খনন কাজ শেষ করা হয়। ২৪টি সমাধির মধ্যে ২৩টিতেই সৈনিকদের দেহাবশেষের বিভিন্ন অংশ মিলেছে। তবে একটি সমাধি থেকে কোনো আলামত মেলেনি।
আজ বিকেলে সমকালকে এসব তথ্য জানান জাপানের ফরেনসিক দলকে সহায়তাকারী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক।
কবর খনন বিশেষজ্ঞ কাজী সাজ্জাদ বলেন, ৮১ বছর পরও সৈনিকদের কিছু কঙ্কাল, মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় আমরা পেয়েছি। পুরো টিম এ জন্য কঠোর শ্রম দিতে হয়েছে। প্রতিটি সমাধি কখনো যন্ত্রপাতি, কখনো হাতে সাবধানতার সঙ্গে খনন করতে হয়েছে। বিভিন্ন দেশে ৬০-৬৫ বছরের রেকর্ড থাকলেও আমার মনে হয় এবারই প্রথম দীর্ঘ এত বছর পর আমরা সমাধি খনন করে সৈনিকদের কিছু হাড় পেয়েছি। তবে একজনের সমাধিতে কিছু পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, যে সমাধিতে কোনো আলামত মেলেনি ওই সৈনিকের বয়স খুব কম ছিল। ২৩ জনের সমাধিতে যতটুকু দেহাবশেষের আলামত মিলেছে আশা করি, জাপানে নিয়ে গিয়ে ফরেনসিক টিম পরীক্ষাগারে একটি ইতিবাচক ফল পাবে। জাপানি ফরেনসিক টিম এ বিষয়ে আশাবাদী বলেও তিনি জানান।
গত ১৩ নভেম্বর খনন কাজ শুরু হয়ে ২৪ নভেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন এই যুদ্ধসমাধি ক্ষেত্র তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) জাপানি ৭ সদস্যের টিম লিডার ইনোওয়ে হাসোয়েকি ও প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সেস মাইকেল সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবার সহযোগিতায় দেহাবশেষগুলো জাপানে নেওয়া হবে। সৈনিকদের পরিবারগুলো এমন উদ্যোগে আপ্লুত। তারা অপেক্ষায় আছেন। প্রিয়জনের প্রতি এ এক অন্যরকম অনুভূতি। তারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে কৃতজ্ঞ।
এদিকে খনন করা সমাধিগুলোতে পুনরায় মাটি ভরাট ও অন্য সমাধির মতো সৌন্দর্যবর্ধণ করে সেখানে জাপানি ২৪ সৈনিকের নাম ও অন্যান্য পরিচয় সম্বলিত পাথরে খোদাই করা ফলক প্রতিস্থাপন করা হবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পশ্চিম পাশে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় অবস্থিত প্রায় ৬ একর জমিতে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি। ১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত বার্মায় ব্রিটিশদের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ১৩ দেশের ৭৩৮ জন সেনাকে এখানে সমাহিত করা হয়। এর আগে ১৯৬২ সালে একজন সৈনিকের দেহাবশেষ তার স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে এখানে ৭৩৭ জন সৈনিকের দেহাবশেষ থেকে যায়।
কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে কুমিল্লা সেনানিবাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে ছিল। যুদ্ধসরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমানঘাঁটি ও ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে ফোরটিনথ আর্মির (চতুর্দশ সেনাবাহিনী) সদর দপ্তর ছিল কুমিল্লায়। জেনারেলদের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো এখানে হতো। এ জন্য যুদ্ধাহত সৈনিকদের চিকিৎসার জন্য ময়নামতিতে নির্মিত হাসপাতালে আনা হতো। সেখানে মারা যাওয়া সৈনিকদের সমাহিত করতে ১৯৪৩-৪৪ সালে ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি বানানো হয়। এর মধ্যে জাপানের আছেন ২৪ জন।
সূত্র-সমকাল
Leave a Reply