সম্পাদকীয়
অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে করপোরেট কর এবং কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা দেশের ইলেকট্রনিক্স শিল্পের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সাল থেকে ইলেকট্রনিক্স শিল্পে করছাড় দিয়ে আসছে এনবিআর। মূলত করছাড় সুবিধা দেওয়ার কারণেই আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। ফ্রিজ, এসি, মোটরসাইকেল শিল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এসব পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে। এখন কর বাড়ানো হলে সব পণ্যের দামও বৃদ্ধি পাবে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদহার দ্বিগুণ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব শিল্প খাত টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে। কর বাড়ানো হলে এ খাতে বিনিয়োগ কমে যাবে। কাজেই করপোরেট কর এবং কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তটি শিল্পবান্ধব নয়।
এর আগে শিল্পকারখানা ও ক্যাপটিভে নতুন সংযোগে গ্যাসের দাম দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পুরোনো শিল্পকারখানায় লোড বাড়াতে চাইলেও গুনতে হবে দ্বিগুণ মূল্য। সংশ্লিষ্ট খাতের শীর্ষ নেতারা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে শিল্প খাতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পুরো গার্মেন্ট ও সুতা সেক্টর পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে চলে যাবে। বেকার হয়ে যাবেন লাখ লাখ শ্রমিক-কর্মচারী।
দেশে এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে ধীরগতি চলছে। বিগত সরকারের আমলে দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে ওঠেনি। দুর্নীতির ব্যাপকতাও এর একটি কারণ ছিল বৈকি। বর্তমানে সে পরিস্থিতি আর নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে স্বভাবতই উদ্যোক্তারা আশা করছেন, সরকারের নীতি হবে শিল্পবান্ধব। বস্তুত উদ্যোক্তারা তখনই কোনো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হন, যখন দেখেন সেই খাতে বিনিয়োগ করলে তাদের কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে না; অর্থাৎ বিনিয়োগ করে সুফল মিলবে। সরকারের উচিত সেদিকেই দৃষ্টি দেওয়া; অর্থাৎ দেশীয় শিল্পের বিকাশে যা করা দরকার, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমরা জানি, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিনিয়োগের মাধ্যমেই অধিকতর উৎপাদন হয়। অধিকতর উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। প্রবৃদ্ধির হার বেশি হলে একটি দেশ দ্রুত সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। বোঝা যাচ্ছে, দেশে অর্থনীতির বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ওপর দায়দেনার চাপ বাড়ছে। সরকারের অর্থ দরকার। তাই বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর বাড়িয়ে রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেশীয় শিল্প সংরক্ষণের বিষয়টিও অনুধাবন করা উচিত বলে মনে করি আমরা। ভোগ বাড়িয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরিবর্তে দাতাগোষ্ঠীর পরামর্শে শিল্পকে চাপ দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর সংস্কৃতি থেকে সরে আসা উচিত এনবিআরের। সরকার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এবং করপোরেট কর ও কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রিম আয়কর দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে, এটাই কাম্য।
Leave a Reply