আল আমিন মিলন,আত্রই,প্রতিনিধি:
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজা আসতে আর মাত্র কিছু দিন বাকি। হিন্দুসম্প্রদায়ের ঘরে-ঘরে দেবীদূর্গার আগমনী বার্তা যেন কড়া নাড়ছে।
এ উৎসবকে পূর্ণাঙ্গরুপে সাজিয়ে তুলতে নওগাঁর আত্রাইয়ের পূজা মন্ডপে গুলোতে প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রুপ।
মৃৎশিল্পীদের নিপুন হাতের ছোয়ায় ইতোমধ্যে মাটির কাজ শেষ করে চলছে রঙ তুলির কাজ। শিল্পীর রঙ তুলির আঁচড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে দশভূজা দেবীদুর্গাসহ বিভিন্ন দেবদেবীর প্রতিমূর্তী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে দেবীদুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। প্রতি বছর অশ্বরের বিনাশ কল্পে মা দেবী দূর্গা এই ধরাধামে আবির্ভুত হয়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, সমাজ থেকে অন্যায় অবিচার গানি দূর করার জন্যই এই পূজার আয়োজন।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়, এবছর আত্রাই উপজেলায় ৪৯টি মন্ডপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে শারদীয় দ‚র্গা পুজা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, পুজা উৎসবকে পরিপ‚র্ণ রূপ দিতে মন্দির গুলোতে চলছে সাজসজ্জার প্রস্তুতি। ইতি মধ্যে বেশির ভাগ মন্ডপে প্রতিমায় মাটি লাগানোর কাজ প্রায় শেষ। কিছু কিছু মন্দিরে শুরু হয়েছে রং তুলির কাজ।
স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে আগত শিল্পীরা এখানে এসে প্রতিমা তৈরি ও রং তুলির কাজ করছেন। অন্যদিকে প্রতিমার পাশাপাশি বাদ্যযন্ত্র ঠিক ও তৈরী করতে ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাক-ঢোল, কাঁশি ও বাঁশির কারিগররা।
জানা যায়, আগামী ১৩ অক্টোবর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়বে। ১৯ অক্টোবর মহা পঞ্চমী, ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী, ২১ অক্টোবর সপ্তমী, ২২ অক্টোবর অষ্টমী, ২৩ অক্টোবর নবমী, ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
আলাপচারিতায় নিজের সম্পর্কে ভবানীপুর গ্রামের নয়ন মালাকার যা বললেন, ছোটবেলা থেকে কাদামাটি ও রঙতুলির সঙ্গে বেড়ে ওঠা নয়ন মালাকারের জন্মস্থান নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার ভবানীপুর গ্রামে।
এখানে তিনি প্রতিমা তৈরি করে থাকেন। প্রতি বছর তিনি ২৫ থেকে ৩০ সেট প্রতিমা তৈরির অর্ডার নেন। এবার ও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে ৭ সেট প্রতিমা ডেলিভারি দিয়েছেন তিনি। প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। তা আবার বিক্রি হয় ২৫ হাজার টাকায়।
এ বিষয়ে শাহাগোলা ইউনিয়ন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী. কালিদাশ মালাকার জানান, আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবকে সার্থক করতে শিশু-কিশোর, নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ এখন শুধু প্রহর গুনছে। তিনি আরো জানান বর্তমান সরকার তাদের সার্বিকভাবে সহযোগীতার পাশাপাশি আর্থিক ভাবে ও সহযোগীতা করে আসছে। এবং এবারের পূজায় তাদের আনন্দো ও বেশি হবে।
পুজাকে সামনে রেখে সম্ভবনার কথা জানালেন আত্রাই থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. তারেকুর রহমান সরকার জানান, শান্তিপূর্ন ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠান সম্পুন্ন করার লক্ষে আইন শৃংখলা বাহিনী সজাগ দৃষ্টি রাখছে। আইন শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তিন স্থরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে এবং থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) দের বিভিন্ন মন্ডপের দায়িত্ব দিয়ে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সবকটি পূজা মন্ডপ গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকবে। অন্যান্য বছরের চাইতে এবার জোরালো প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি এবারের পূজায় কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবেনা। তবে এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সবার সহযোগিতায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যদিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত হবে দুর্গাপূজা এমনটাই আশা করছেন উপজেলাবাসী।